নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৮৪ শতাংশ শ্রমিক উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া এ খাতের ১৬ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগামীতে তারা কম মজুরি পাবেন। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের (এমএফও) যৌথ জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ, আয়, ব্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মজুরি প্রদান ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ নামে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপের মূল লক্ষ্য তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বৈশ্বিক ব্যান্ডগুলোকে শ্রমিকমুখী উদ্যোগ নিতে সহায়তা করা, গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা এবং শ্রমিকদের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা। চলতি বছরের ৬ আগস্ট, ১ হাজার ২৭৮ জন শ্রমিকের একটি নির্বাচিত পুলের মধ্যে ফোনে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংস্থা দুটির জরিপে বলা হয়েছে, সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা বাদে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক জানান, তাদের কারখানায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ৪৭ শতাংশের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মনে করেন অতিরিক্ত পদক্ষেপগুলো সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট ছিল। আগস্টের ৬ তারিখ পরিচালিত এই জরিপে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের কাছে লকডাউন চলাকালে কাজে ফেরার নির্দেশের বিষয়ে তাদের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়। ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা শ্রমিক বলেছেন, দেশে কোভিড-১৯ এর বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। আগস্টের ৬ তারিখ ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা এর আগের সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। প্রথম সপ্তাহে ৮৯ শতাংশ পুরুষ ও ৮১ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন। কাজে উপস্থিত থাকা ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৪৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা লকডাউনের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে অসুবিধা বোধ করেননি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কাজে উপস্থিত থাকা পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের কাজের সময় পরার জন্য মাস্ক দেওয়া হয়েছিল। কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন কি-না জানতে চাইলে তুলনামূলক ইতিবাচক চিত্র পাওয়া যায়। কাজে যোগ দেওয়া উত্তরদাতাদের মাঝে ৭৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কাজের সময় কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পেরেছেন। এই জরিপের অধীনে, সানেম ও এমএফও ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এবং সাভার) কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক, যা সামগ্রিকভাবে এই শিল্পের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন। এই জরিপে পোশাক শ্রমিকদের মাঝে কোভিড-১৯ এর কারণে ঘোষিত লকডাউনের প্রভাব এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা ও আগামীতে মজুরি হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভাবনার বিষয়ে তাদের মনোভাবের ওপর আলোচনা করা হয়েছে। আগামীতে কী পরিমাণ মজুরি পাবেন বলে ধারণা করেন জানতে চাইলে ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা প্রায় একই ধরনের মজুরি পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন। ১৯ শতাংশ জানান তারা এ বিষয়ে অনিশ্চিত। আর ১৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে কম মজুরি পাবেন বলে ধারণা করছেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম