নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীকালেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হতে চলেছে। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুন-এপ্রিল) সব মিলিয়ে ৫২ বিলিয়ন ( ডলারেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে আমদানি খাতে এবার ব্যয় ৬০ বিলিয়ন (৬ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে এযাবৎকালে দেশে সর্বোচ্চ আমদানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯.৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ মাসেই শেষ হবে চলতি অর্থবছর। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল পর্যন্ত আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এপ্রিলে দেশে ৬২৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে; যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১১৯ শতাংশ বেশি। আর মহামারীর মধ্যেই এ বছরের জানুয়ারিতে ৭২৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। এক মাসের হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৫৫৬ কোটি ৪২ লাখ ও ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। তার আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ৪২৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। আর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি হয় যথাক্রমে ৩৮১ কোটি, ৪৬৫ কোটি ও ৪৩৭ কোটি ডলার। নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৮২ কোটি ও ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য।
সূত্র জানায়, গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৫০২ কোটি ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়। যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১৮২ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরের এপ্রিলে ৪৩৬ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। যা গত বছরের এপ্রিলে ছিল ২৪৭ কোটি ডলার। ওই হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৭৬.১৯ শতাংশ। আর অর্থবছরের বাকি দুই মাস অর্থাৎ মে ও জুন মাসে ৪০০ কোটি ডলার করে ৮০০ কোটি ডলারের পণ্যও যদি আমদানি হয়, তাহলেই মোট আমদানি ব্যয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাব শুরুর আগ থেকেই দেশের অর্থনীতিতে ধীরগতি ছিল। করোনার প্রভাব শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে তা আরো ধীর হয়ে পড়ে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর আমদানি কমেছিল ৮.৫৬ শতাংশ। রফতানি কমেছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুর দিকেও আমদানি-রফতানিতে খারাপ অবস্থা ছিল। গত অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে আমদানি কমেছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। তবে নবেম্বর থেকে আমদানি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি রফতানিতেও ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রফতানি আয় বেড়েছে ১৩.৬৪ শতাংশ।
এদিকে অর্থনীতিদের মতে, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ওসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। আবার রফতানিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামালের আমদানিও অব্যাহত আছে। দেশের অভ্যন্তরে ভোগও সেভাবে কমেনি। সব মিলিয়েই আমদানি বাড়ছে। তাছাড়া আমদানি ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম অয়েল এবং সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দামও বেশ বেড়েছে। তাতে আমদানি খরচও বেড়েছে। তবে একটা উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি কমছে। মানে হচ্ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে না।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম