নিজস্ব প্রতিবেদক:
কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লেও ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে দেশের শিক্ষার্থীরা। ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয় ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় নতুন ভর্তির আসনসংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি ফাঁকা থাকছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় নতুন ভর্তির জন্য আসনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ১০০। আর ওসব আসনে ভর্তি হয়েছে মোট ৭৩ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী, যা গত ছয় বছরে সর্বনিম্ন। ফলে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অর্ধেক আসনও পূরণ হয়নি।
অথচ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ চাহিদার কথা বিবেচনা করে গত কয়েক বছরে দেশে ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় আসনসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ছাড়াও প্রায় ৩ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ২৩টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপরও শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলে ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোকে দেশে মানসম্মত ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় অগ্রণী ধরা হয়। যদিও সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৪৮ শতাংশ তাদের ডিগ্রি সম্পন্ন করে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন বলে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক জরিপের তথ্যে উঠে এসেছে। বাকি সাড়ে ৫১ শতাংশই বেকার থেকে যাচ্ছে। আবার যারা চাকরি পাচ্ছেন, তারাও কাক্সিক্ষত মাত্রায় আয় করতে পারছেন না। ব্যানবেইসের জরিপের তথ্যানুযায়ী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর ডিগ্রি নিয়ে চাকরিতে ঢোকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থান থাকলেও চাকরির বেতন কাঠামোয় তাদের অবস্থান এখনো তেমন একটা ভালো উচ্চতায় পৌঁছেনি। সামাজিকভাবেও ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। সমাজে ডিপ্লোমা প্রকৌশল বিষয়ের শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করা হয় তুলনামূলক কম মেধাবী হিসেবে। আর এসব কারণেই শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষায় কম আগ্রহী হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে দেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৮৪০। সেখান থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এ সংখ্যা নেমে এসেছে ৭৩ হাজার ২৭২-এ। এ অনুযায়ী গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।
কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের শিক্ষার্থীদের চাকরিতে নিলেও যথাযোগ্য মূল্যায়ন করছে না। বেতন কম দিচ্ছে। এ বিষয়টিও শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করছে। তাছাড়া ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিএসসি করার ক্ষেত্রে আসনসংখ্যা কম থাকায় যারা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তারা ডিপ্লোমা না করে সাধারণ কলেজকে বেছে নিচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৮৪০। পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৭৫ হাজার ৮৪৯ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৭৯ হাজার ৯৭৯, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৮১ হাজার ৭৬ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৭৭ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছিলো।
এ বিষয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ডিপ্লোমা পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ভালো বেতন পেলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেশ কম মজুরি দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের দেখে হয়তো কেউ কেউ নিরুৎসাহিত হয়। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ জরুরি।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম