সাগরপাড়ের মানুষ ভুলতে পারেনি আজও সিডরের সেই দুঃস্বপ্ন
জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী (কলাপাড়া) :
সাগরপাড়ের মানুষ সিডরের সেই দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারেনি আজও। আকাশে মেঘ কিংবা আবহাওয়ার সিগন্যাল থাকলেই দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় তাদের। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিট। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে বইছে দমকা হাওয়া। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে সচেতন মানুষগুলো যেতে শুরু করলেন আশ্রয় কেন্দ্রে। বেশির ভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই আইলো গেলো-এবারেও তাদের কিছু হবেনা।
কিন্তু সেদিন ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানি আঘাত হেনেছিল দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহূর্তে পরিণত হয় অচেনা এক ধ্বংসস্তুপে। মাত্র আধা ঘণ্টার তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ব্যাপক বাড়ি-ঘর ও গাছপালা। বন্ধ হয়ে যায় গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাসিয়ে নেয় গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। প্রানহানী হয় অনেকের। তাই ওই দিনের ভয়াবহতা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষ।
জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন সিডর ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেড়িবাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা, কৃষকের ক্ষেত ও মৎস্য সম্পদ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎ সহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু। এছাড়া সুপার সাইক্লোন সিডরে এ উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৭৮ জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জন জেলে। স্বজন হারাদের কাছে তাদের খোজখবর নিতে গেলে তারা বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা জীবনে এই দিনটির কথা কখনোই ভুলতে পারবেনা।
স্থানীয়রা জানান, সিডরের দীর্ঘ ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও সাগর ও নদীর মোহনা তীরবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি এখনও। এর ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জো’তে বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। এসময় কৃষকদের চাষাবাদ তো দূরের কথা, ঘর বড়িতে থাকাই দুস্কর হয়ে যায়। তবে ওই গ্রামীন জনপদের মানুষ বলেছেন, এ এলাকায় কত কিছুই হয়েছে, হয়নি শুধু টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে সিডর পরবর্তি সময় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালের অধিনে এ সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পূর্ণনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন পোল্ডারের বেড়িবাঁধ নদী ভাঙলে শিকার হচ্ছে। এ সকল বেড়িবাঁধ ডাম্পিং পদ্ধতিতে নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া নীলগঞ্জের জালালপুর কয়েকটি পয়েন্টে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি