জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :
শ্রীমঙ্গলের প্রত্যন্ত এলাকা হরিণছড়া চা বাগানের দিনমজুর সবুজ তজু প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এ আনন্দে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু উপহার দিতে বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তৈরী করেছেন প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার একটি ভাস্কর্য। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ছুঠে যাচ্ছেন দর্শনার্থী।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণছড়া চা বাগানে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্টীর অধিবাসী দিন মজুর সবুজ তজুর ছোট বেলা থেকেই কুর্টির শিল্প সামগ্রী তৈরীতে রয়েছে সবুজের পারদর্শীতা। আঁকেন ছবিও। কিন্তু সংসারের টান পুরণে সবসময় তা করতে পারেন না। বাগানের মাটিয়া ওয়ালের নড়বড়ে এক ঘরে কোন রকমে তার বসবাস। শ্রীমঙ্গল উপজেলা ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্টীর সমন্বয়ক তাজুল ইসলামের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘর উপহার দেন। আর এ পাকা ঘর পেয়ে তজু পরিবারের যেন আনন্দের সীমা নেই।
সবুজ ইচ্ছা পোষন করেন প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভাস্কর্য উপহার দেয়ার। বিষয়টি তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করেন। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে উৎসাহ দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবিও উপহার দেন। সবুজ এই ছবি দেখে প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার একটি ভাস্কর্য তৈরী করেন।
সবুজ জানান, প্রায় দেড়মাস সময়ে একটি গাছ খোদাই করে ৪৩ ইঞ্চি লম্বা প্রধানমন্ত্রীর হাস্যউজ্জ্বল একটি নিঁখুত ভাস্কর্য তৈরী করেন। তিনি বলেন, এই ভাস্কর্যটির মুখমন্ডরে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ব নেতৃত্বের ছাপ। দেশের মানুষের আস্থার একটি জায়গা। যে চেহারা প্রকাশ করে সকল প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে দেশেবাসীকে দিয়েছে স্বস্তি ও শান্তির বারতা। তিনি বলেন, মনের আনন্দে তিনি শিল্প কর্ম করেন। কিন্তু তার এই শিল্পকর্ম বিক্রি খুব কমই হয়।
তিনি তা তৈরী করে মানুষকে উপহার দিয়েই আনন্দ পান। এখন তাঁর ইচ্ছা এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে দেয়া।এদিকে তার তৈরী এমন ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে যাচ্ছেন নানান মানুষ। তার শিল্প কর্ম দেখতে আসা মো: রিপন আলী জানান, খবর পেয়ে তিনি দেখতে এসেছেন। এই ভাস্কর্যটি হুবু হুবুহু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সবুজের স্ত্রী পুরবী রিচিল জানান, ভাঙ্গা ঘর থেকে তারা পাকা ঘরে উঠবেন এমনটা তাদের ভাবনায়ও ছিলো না। তিনি হরিণ ছড়া চা বাগানের শ্রমিক। স্বামীর স্থায়ী কোন কাজ নেই। কখন মানুষের ঘর রং এর কাজ করেন। কখনও লেবু বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন। কখনও ঘর মেরামতের কাজ করেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গলে লেখা পড়া করাচ্ছেন। পরিবার ও সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ যোগান দিতে হিমসীম খেতে হয় তাদের। এই বস্থায় নিজের ঘর পাকা করে তৈরী করা এটি শুধু স্বপ্নই ছিল। তিনি বলেন, এতো ভিতরে এসে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রী পাকা ঘর দিবেন এটি আমাদের কাছে স্বর্গ সূখের মত।
তিনি বলেন, “ঘর পেয়ে আমার স্বামী সবুজ তজু এতো খুশি তিনি মনে মনে চিন্তা করেন প্রধানমন্ত্রীকে নিজের হাতে তাঁর একটি ভাস্কর্য তৈরী করে দেয়া যায় কিনা। দুজনের এমন ভাবনা মাথায় নিয়ে কয়েকদিন কাটে। এক সময় ভাবনায় আসে আমাদের এই ছোট উপহার এটি প্রধানমন্ত্রীকে কিভাবে দিবো।”
সবুজ তজু জানান, তাদের এই ভাবনার বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে উৎসাহ দেন। খুশি হয়ে তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েও সহায়তা করেন। প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবিও দেন।
সবুজ শুধু প্রধানন্ত্রীর ভাস্কর্য নয়, তিনি গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্বারক হিসেবে কাঠ দিয়ে মাছধরা, চা পাতা তুলা, ঘাস কাটা, পান চাষ, ডিম থেকে পাখির বাচ্চা বেড় হওয়া, জেবরা, গন্ডার, হরিণ, চা কন্যা, বঙ্গবন্ধু, লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও মা মারিয়ার মুর্তিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট ভাস্কর্য তৈরী করেছেন। কিন্তু সংসারের টানপুরণে তা নিয়মিত করতে পারেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তা করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জানান, তিনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর কাজ করতে গিয়ে তার কুটির শিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীতে বেশ দক্ষতা লক্ষ করেন। তার তৈরী ছোটকাটো অনেক জিনিশ তিনি দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার দেন। তিনি বলেন, তাঁর এমন প্রতিভা থাকলেও তার তৈরী জিনিশ বিক্রয় হয় খুব কম। তৈরী কৃত জিনিশ গুলো বের্শিভাগই তিনি মানুষকে উপহার হিসেবে দেন। ফলে তার এই শিল্পকর্ম দিয়ে সংসার চলে না। তাই তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। আর কাঁজের ফাঁকে মনের আনন্দে এই কাজগুলো করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, সবুজ তজুর অনন্য প্রতিভা রয়েছে। তার তৈরী চা কন্যাসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমরা সংগ্রহ করেছি। তার হাতের নিঁপুনতা অসাধারণ। তিনি জানান, তার আর্থিক সংকট রয়েছে এবং নড়বড়ে মাটিয়া ওয়ালের ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঘরে বসবাস করেন। তার অবস্থা বিবেচনায় তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর উপহার দেন। ইতিমধ্যে ঘরের কাজ শেষ হয়েছে এখন শুধু রংএর কাজ বাকী।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আমাদের নির্ভরতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একেবারে তৃণমুল পর্যন্ত মানুষ ভালোবাসে এই ভাস্কর্য টি তারই একটি নিদর্শন। তিনি বলেন, জিনিষটি ক্ষুদ্র হলেও এতে ভালোবাসা কোন ঘাটতি নেই। সাধারণ মানুষ মন প্রাণ ভরে প্রধানমন্ত্রীকে ভালেবাসে। সে যে তার অবস্থানকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য এমন একটি ভাস্ক]র্য তৈরী করেছে এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে কাঠের এই ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
সবুজের এই অসাম্য শিল্পকর্মটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছাবে এমনটাই চাওয়া তজু পরিবারসহ হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিকদের।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি