November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, November 14th, 2023, 3:19 pm

কানাডাগামী সিলেটের ৪২ যাত্রী ফেরত! সমালোচনার মুখে বিমান কর্মকর্তারা

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

কানাডা যাওয়ার পথে ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান কর্তৃপক্ষ ৪২ সিলেটিকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় সিলেট জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বৈধ ভিসা সত্ত্বেও বিমান কতৃপক্ষ তাদেরকে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দেশ বিদেশে তোলপাড় চলছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ছাড় দিলেও বিমান আটকে দেয়ার ঘটনা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। বিমান কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

কানাডার ভিসা পেয়েছিলেন সিলেটের ৪২ জন। তারা ঢাকার হজরত শাহজালাল র. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১০ নভেম্বর শুক্রবার রাতে ওই ৪২ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যরা তাদের আটকান। পরে তারা এই যাত্রীদের ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যম নিয়ে অভিযোগ তুলে পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল কেটে দিয়ে লাগেজসহ তাদের ফিরিয়ে দেন।
তবে বিমানের একটি সূত্র এক গণমাধ্যমে জানায়, টরন্টো পৌঁছানোর পর যদি এই যাত্রীরা ইমিগ্রেশনে আটকে যান, তাহলে প্রতিটি যাত্রীর জন্য বিমানকে ১৮০০ ডলার জরিমানা করা হবে।

কিন্তু অভিযোগকারীরা বলছেন, এটা হতো যদি যাত্রীদের ভিসা অবৈধ হতো তবে। তাই বিমান কর্তৃপক্ষ দেখতে হবে ভিসা বৈধ কিনা। ভিসা কীভাবে পেলেন তা নয়। কিন্তু বৈধ ভিসায় এই জরিমানার কোনো নিয়ম নেই। এটা সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনের ব্যাপার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ এটি বিমানবন্দরে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ মহলের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলেও সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। সোমবার সারাদিনই বিষয়টি নিয়ে সিলেট ছিল আলোচনায় সরগরম।

বিমানসূত্রে জানা গেছে, ওই যাত্রীরা যেতে না পারায় প্রায় কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বিমানের। এ ক্ষতি পোষাতে বিমানের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনার পর সিলেট এসে যাত্রীদের ডাকলেও তারা সাড়া দেননি।

গত ১০ নভেম্বর বৈধ ভিসা পেয়ে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন তারা। পরে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার পর কানাডাগামী বাংলাদেশ বিমানে ওঠার সময় তাদের আটকে দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকেই সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সামাজিক মাধ্যম থেকে নিয়ে চায়ের স্টলে।

সবাই বলছেন, অন্যদেশে যেখানে বিমানবন্দরে দেশি যাত্রীদের বিদেশ গমনে আলাদা সহায়তা করা হয় সেখানে বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। দীর্ঘদিন ধরে বিমান যাত্রীরা বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মের বাইরে গিয়ে অহেতুক যাত্রীদের জেরা করে হয়রানি করে। শুক্রবারের এই ঘটনাটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইমিগ্রেশন শেষ করে সব কাজ সম্পন্ন করার পর কোন এখতিয়ারে বিমান তাদের আটকায় তা একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, এটা তাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। বৈধ ভিসা থাকার পরও বিমান তাদের সাথে অবিচার করেছে। তাদের কাগজপত্রে যদি কোনো ত্রুটি থাকতো তবে কানাডা বিমানবন্দর নামার পর সেখানকার ইমিগ্রেশন এই ব্যাপারটি দেখার বিষয়। এই ৪২ জনের সাথে ৪২টি পরিবারের স্বপ্ন জড়িত ছিল, কিন্তু বিমান যা করেছে তা ঠিক হয়নি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, তাদের ভিসা যদি বৈধ হয়ে থাকে তবে বিমানের আটকানোর বা ভিসার কাগজ দেখার এখতিয়ার নেই। বিমান কেবল ভিসা বৈধ কিনা তা দেখতে পারে।

তিনি বলেন, অনেক সময় এম্বেসি থেকে ভিসা বাতিলের জন্য ইমেইল করে থাকে, যা অনেক যাত্রী লুকিয়ে রাখেন। অনেকের পাসপোর্টে ভিসা থাকে কিন্তু পরে এম্বেসি ভিসা বাতিল করে ইমেইল দিয়ে থাকে, যা বিমানবন্দরে চেক করলে ধরা পড়ে। যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের বেলায় এমন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। এটা কেবল বিমান নয় যেকোনো এয়ারলাইন্সের বেলায়ই হতে পারে। যদি এই ৪২ জনের বেলায় ভিসা বাতিল করা হয়েছে এমন ইমেইল না এসে থাকে তবে তাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, ভিসা প্রদান একটি দেশের নিজস্ব ব্যাপার। ভিসার কাগজপত্রে যদি কোনো সমস্যা থাকতো তবে তা কানাডা নামার পর সেখানকার বিমানবন্দরে তাদের ইমিগ্রেশনের বিষয়। ভিসা কীভাবে পেলো এটা বিমান কর্তৃপক্ষের দেখার এখতিয়ার নেই। বৈধ ভিসা নিয়ে ভ্রমন করতে না দেওয়া বিমানের অন্যায় হয়েছে। এতে দেশের ভাবমূতি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারাই প্রবাসে যান তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে যান। এর সাথে অনেক পরিবারের স্বপ্ন এবং দেশের রেমিট্যান্সের ব্যাপারও জড়িত। তাই বিষয়টি ঠিক হয়নি।

এদিকে, অনেকে বলছেন বিমানবন্দরে বিদেশ যাত্রীদের এ ধরনের হয়রানি অহরহ ঘটছে। তারা অভিযোগ করেন, অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায়ই বিমানের অসাধু লোকজন এটা করেছে। তাই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। তারা বলেন ভিসা দিয়েছে কানাডা, ভিসায় কোনো সমস্যা থাকলে কানাডা নামার পর কানাডিয়ার ইমিগ্রেশন এটা দেখবে। বিমানের দায়িত্ব কেবল যাত্রী বহন, যাত্রীর ভিসা বৈধ কিনা তারা কেবল এটা দেখবে। কিন্তু বৈধ ভিসা থাকার পর তারা কেন এটা করলো? সঠিক তদন্ত করলেই তা বেরিয়ে আসবে।