অনলাইন ডেস্ক :
অবশেষে দেশ ছেড়েছেন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটের দিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে৮৫৮৫ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মুরাদ হাসানের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি পদত্যাগের দিন (৭ ডিসেম্বর) নিজের হাতে নিয়ে গেছেন তিনি।
গত চার দিন ধরে অগোচরে থাকা মুরাদকে এদিন রাত ৯টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ রজনীগন্ধায় দেখা যায়।
মুরাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলেও তার দেশত্যাগে কোনো বাধা নেই বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন।
মুরাদ সাম্প্রতিক সময়ে গত সেপ্টেম্বরেই কানাডা সফর করেছিলেন। তখন অটোয়া, টরন্টো, মন্ট্রিল, কুইবেক, ভ্যাংকুভার মিলিয়ে সপ্তাহ খানেক সে দেশে ছিলেন তিনি। কানাডা থেকে ফিরে অক্টোবরেই আবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন মুরাদ। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদে থাকাকালে তার এই সফরগুলো সরকারি সফর ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
অডিও কেলেঙ্কারির পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মঙ্গলবারই তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ। এরপর আওয়ামী লীগে পদ হারালেও তার সংসদ সদস্য পদ এখনও বহাল রয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান।
এরপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার অশালীন আচরণের একটি অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে মুরাদের অশালীন বক্তব্যের আরেকটি অডিও।
এরপর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে মুরাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার থেকেই অগোচরে থাকা মুরাদ পরদিন তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তার দপ্তরে। এরপর সেদিনই তা গৃহীত হয়।
এরমধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকেও মুরাদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এসবের মধ্যে মুরাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেইসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়ে তিনি লিখেছিলেন, “আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।”
এরপর বুধবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন,“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরম শ্রদ্ধেয় মমতাময়ী মা,বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, আমি যে ভুল করেছি তা আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমি সবসময়ই মাথা পেতে নিবো আমার বাবার মতো।”
তুমুল সমালোচনা শুরুর পর সোমবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যাননি মুরাদ। তখন থেকে সচিবালয়েও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
সোমবার চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলে তিনি অবস্থান করেছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর আসে। তবে রাতেই তিনি ওই হোটেল ছাড়েন।
এই পুরোটা সময় তার টেলিফোনও বন্ধ ছিল। তার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও তার অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়নি।
এদিকে পদত্যাগের পর মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মীদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের অভিযোগে মুরাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করেন এক ছাত্রলীগ নেতা।
তার ওই অভিযোগ জিডি হিসেবে নিয়ে তার তদন্ত শুরুর কথা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ।
তবে মুরাদকে নিয়ে প্রশ্নে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “এগুলো (মুরাদের বিদেশ যাওয়ার খবর) আমার জানা নেই। উনি বিদেশ যাবেন, নাকি স্বদেশে থাকবেন, সেটা তার ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।”
(সূত্র : বিডি নিউজ ২৪ ডক কম)
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২