April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 18th, 2022, 9:35 pm

কারখানার উৎপাদন সঙ্কটে বিপাকে শিল্পোদ্যোক্তারা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সঙ্কটে দেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদন। মূলত ঘন ঘন লোডশেডিং এবং গ্যাস সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি বাড়িয়ে দিচ্ছে কারখানার উৎপাদন খরচ। ফলে একদিকে শিল্প-কারখানার উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় শিল্প মালিকরা লোকসানে পড়ছে। ফলে তারা ব্যাংকের ঋণ ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পেরে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে। রুগ্ন হয়ে পড়ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ওসব কারণে চরম বিপদে পড়েছে শিল্পোদ্যোক্তারা। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিল্প-কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের চাপ কম থাকা এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অধিক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারখানার জেনারেটরের ওপর চাপ বাড়ছে এবং ওয়েস্টেজ বেশি তৈরি হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন খরচ বাড়লেও উৎপাদনের পরিমাণ কমে আসছে। আর গ্যাস সঙ্কট পুরো শিল্পখাতের গতিই কমিয়ে দিয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটে দেশের শিল্প-কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না। কারখানাগুলো উৎপাদনের টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে কারখানাগুলো চাহিদানুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় টার্গেট পূরণ করার জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে কারখানা চালাতে যেয়ে কয়েকগুণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানিকারকরা সময়মতো পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে অনেক ক্ষেত্রেই বিমানে করে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। আর তাতে তাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কারখানা চালিয়ে মাস শেষে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা শিল্প মালিকদের কঠিন হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও মালিকদের বিল উত্তোলন এবং কর্মীদের বেতন প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং অনেক উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪১০ কোটি ঘনফুট। তার মধ্যে শিল্প-কারখানায় ৫০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার হয়। এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদার একটি বড় একটি অংশ পূরণ হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমেছে। ফলে গ্যাসের চাহিদার তুলনায় যোগানও আরো কমেছে। ফলে সংকট বেড়েছে। একই কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে লোডশেডিং।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেন শিল্পোদ্যোক্তাই ঋণ পরিশোধ করছে না। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে (উইলফুল) তারা ঋণখেলাপি থেকে যাচ্ছে। সাধারণত, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যারা ঋণ নেয় তারাই উইলফুল ঋণখেলাপি। ওসব খেলাপিরা অনেকক্ষেত্রেই ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ঋণ নেয়। একইভাবে ঋণ যাতে পরিশোধ করা না লাগে সেজন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়। আর ওসব ঋণখেলাপির কারণে প্রকৃত উদ্যোক্তারা বিপদে পড়ছে। প্রকৃত উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় যেসব উদ্যোগ নেয় প্রকৃত উদ্যোক্তারা সেগুলোর সুবিধা পায় না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাসনির্ভর বড় বিনিয়োগ বিশেষত টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ে পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা বাড়ছে। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের লোডশেডিং সঙ্কটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে জেনারেটরের ওপর চাপ পড়ছে। কিন্তু জেনারেটর দীর্ঘ সময় চালিয়ে রাখা যায় না। সেক্ষেত্রে জেনারেটর বন্ধ রেখে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া গ্যাসের চাপ কম থাকায় এমনিতেই দিনের বেলা কর্মঘণ্টার সময় শ্রমিকদের কাজে লাগানো যায় না। আবার যখন গ্যাসের চাপ থাকে তখন শ্রমিকদের কাজে লাগাতে হলে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়। আর উৎপাদন ঠিক রাখতে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করায় খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকের কিস্তি এবং সুদ সময়মতোই দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় যাদের সক্ষমতা কিছুটা কম সেসব উদ্যোক্তারা খেলাপি হয়ে পড়ছে।