নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারনেট সুবিধায় আনা শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি একাধিকবার নিলামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। গাড়িগুলো বিক্রির জন্য এখন পর্যন্ত ৫ বার নিলাম হলেও বারবার তা ভেস্তে যাচ্ছে। সর্বশেষ নিলামও প্রত্যাশিত দাম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স পারমিট বা সিপি) না পাওয়ায় ভেস্তে গেছে। আমদানি নীতি অনুযায়ী ৫ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ। ওই ধরনের গাড়ি খালাস করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগে, যা সিপি হিসাবে পরিচিত। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামে ওঠানো গাড়িগুলো ৫ বছরের অধিক পুরোনো হওয়ায় সেগুলো খালাস করতে ছাড়পত্র নিতে হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস টানা ৫বার নিলামে তুলেও কারনেট সুবিধায় আনা বিলাসবহুল ১১০টি গাড়ি বিক্রি করতে পারছে না। এ অবস্থায় গাড়িগুলো কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে তা জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পর্যটকদের জন্য ‘দ্য কাস্টমস কনভেনশন অন দ্য টেম্পোরারি ইমপোর্টেশন অব প্রাইভেট ভেহিক্যালস (১৯৫৪) অ্যান্ড কমার্শিয়াল রোড ভেহিক্যালস (১৯৫৬)’ নামে একটি আন্তর্জাতিক আইন সারা বিশ্বে ‘কারনেট দ্য প্যাসেজ’ নামে পরিচিত। ওই সুবিধার আওতায় কোনো পর্যটক চাইলে বিনা শুল্কে তার গাড়ি নিয়ে যে কোনো দেশে প্রবেশ করতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে- ফিরে যাওয়ার সময় গাড়িটিও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত এক বছরের জন্য ওই সুবিধা বহাল থাকে। মূলত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটকরা পর্যটক সুবিধার জন্য ওসব গাড়ি এনেছিল। ওই গাড়িগুলো বিগত ২০১৬ সাল থেকে এ নিয়ে পাঁচবার নিলামে তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা যায়নি। এবার নতুন যুক্ত হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র জটিলতা।
সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে ‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় দেশে এনে খালাস না নেয়া ১১০টি বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, জাগুয়ার, লেক্সাস ও মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে রয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গাড়িগুলো বিক্রির জন্য ৫ম বারের মতো ১১০টি গাড়ি নিলামে তোলে চট্টগ্রাম কাস্টমস। নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে মিতসুবিশি জিপ ২৬টি, মার্সিডিজ বেঞ্চ ২৫টি, বিএমডব্লিউ ২৫টি, ল্যান্ড রোভার ৭টি, ল্যান্ড ক্রুজার ৭টি, একটি সিআরভি, লেক্সাস ৬টি, ফোর্ড ৫টি, জাগুয়ার ৩টি, একটি দাইয়ু ও একটি হোন্ডাসহ বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের সব গাড়ি।
সূত্র আরো জানায়, দাম অনুযায়ী নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মধ্যে ৫টি গাড়ি নিলাম সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী বিক্রয়যোগ্য। বাকি ১০৫টি গাড়ি নিলামে অনুমোদনযোগ্য নয়। তাছাড়া সিপি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। ১৩টি গাড়ি ৫ বছরের কম সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগবে না। তবে ৮৬টি গাড়ি খালাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগবে। ওসব গাড়ির ছাড়পত্র না পেলে নিলামে প্রত্যাশিত দাম পেলেও আইনগত কারণে বিক্রি করা যাবে না।
এদিকে গাড়ির ব্যবসায়ীদের মতে, দীর্ঘ সময় গাড়িগুলো বন্দরে পড়ে থাকার কারণে বেশির ভাগ গাড়িই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু গাড়ির চাবি নেই। তাছাড়া কিছু চাকা ও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। ইঞ্জিনে জং ধরেছে। গাড়ির সামনের-পেছনের কাচ ভাঙা। চাকা ফেটে দেবে গেছে। বডিতে মরিচা ধরেছে। ভেতরের ডেকোরেশনের অবস্থা যাচ্ছেতাই ও নোংরা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কাস্টমস গাড়িগুলোর যে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করেছে ওই দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফখরুল আলম জানান, ভিত্তিমূল্যের চেয়ে নিলামে গাড়িগুলোর দাম কম পাওয়া গেছে। সেজন্য নিলামসংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ অনুযায়ী সেগুলো বিক্রয় সম্ভব নয়। গাড়িগুলো কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে সে বিষয়ে এনবিআরের দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ গাড়ি খালাসে সিপি লাগবে। ওই কারণেও গাড়ির দাম কম উঠতে পারে। তবে আশা করা যায় ছাড়পত্র জটিলতা সমাধান করা গেলে প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যাবে। এনবিআর এ নিয়ে কাজ করছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ