November 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 15th, 2024, 10:13 pm

কিভাবে যাব সেতু দিয়ে ?

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

কুলাউড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর-হাসিমপুর সড়কে ফানাই নদীর ওপর প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় আগে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্ত ওই সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গেল তিন বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে নদী পুনঃখনন করা হয়। এসময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে দেবে যায় সেতুটি ।

পাশাপাশি নদীর এক পাশে বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া রাঙ্গিছড়া-লক্ষ্মীপুর-গুতগুতি সড়কের বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ে। এ অবস্থায় সেতুসহ ওই সড়ক দিয়ে মরণ ঝুঁকি নিয়ে যানসহ লোকজন চলাচল করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির উদ্যোগে প্রায় ২৪ মিটার দীর্ঘ পাকা ওই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। লক্ষ্মীপুর-হাসিমপুর সড়কে ফানাই নদীর ওপর ওই সেতু দিয়ে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পুরশাই, ভাটগাঁও ও দেওগাঁও, কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর, বেড়ী, রাঙ্গিছড়া এবং রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নর্তন, কবিরাজী ও পালগ্রামের অন্তত ২০ হাজার লোকজন প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে কর্মধা ইউনিয়নের রাঙ্গিছড়া বাজারসহ উপজেলা সদরে চলাচল করেন। এছাড়া লক্ষীপুর, গুতগুতি, প্রতাবী এলাকার শিক্ষার্থীরা সেতুর ওইপারে কর্মধা ইউনিয়নের বাবনিয়া হাসিমপুর নিজামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে পড়ালেখা করে। অন্যদিকে বাবনিয়া, বেড়ীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার শিক্ষার্থীরা সেতুর এপারে লক্ষীপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা করে।

সূত্র আরও জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাউবো প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পুনঃখনন করে। কাজ সম্পন্নের আগেই অতিবৃষ্টিতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। তখন সেতুর মধ্যবর্তী স্থান দেবে যায়। একই সময় সেতুর পূর্ব পাশের বাঁধে রাঙ্গিছড়া-লক্ষ্মীপুর-গুতগুতি সড়কের প্রায় ১০০ ফুট জায়গা ধসে পড়ে। বর্তমানে চলতি বন্যায়ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে আবারও সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যেকোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যেতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব পাশে স্থাপিত একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, যান চলাচল নিষেধ, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ। দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন হাঁটার সময় সতর্কভাবে সেতু পারাপার হচ্ছেন। প্রায় ১২-১৪ ফুট সড়কের দুইভাগ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। সীমিত পরিসরে ওই সড়ক দিয়ে একইভাবে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের যান ও লোকজন চলাচল করছে। যেকোন মুহুর্তে সেতুটি ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাবে এতে বন্ধ হয়ে যাবে সবধরণের চলাচল। বাড়বে মানুষের দুর্ভোগ। এ থেকে পরিত্রাণ চান এলাকার লোকজন এবং নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানান। স্থানীয় লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রওশন আলী, সাংবাদিক আলাউদ্দিন কবির, সমাজকর্মী রাহেল আহমদ বলেন, ফানাই নদী খননের সময় সেতু ও সড়কের বেশ ক্ষতি হয়েছে। সেতুর মাঝখানের পিলারের কাছ থাকি মেশিনে (এক্সকাভেটর) মাটি কাটে। এর পরে পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে পিলার কাইত হয়ে সেতুটি নিচ দিকে দেবে গেল। বাঁধের কাছ থাকি মাটি কাটায় রাস্তাও ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। সম্প্রতি সৃষ্ট বন্যায়ও সেতুটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জনস্বার্থে সেতুটি নতুন করে নির্মাণ ও ধসে পড়া সড়ক মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

এলজিইডির কুলাউড়া কার্যালয়ের প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, সেতুটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে এলজিইডির লোকজন। নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

এলজিইডির মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি সরেজমিনে ওই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও সড়কটি দেখেছেন। ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের ব্যাপারে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তবে এখনো তা অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেতু ও সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, দ্রুত পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ফানাই নদী পুনঃখনন করা হয়েছিল। নদীর পরিমাপ অনুযায়ীই এ কাজ হয়েছে। অচিরেই ওই এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সড়ক ধসে পড়ায় নদীর বাঁধে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।