অনলাইন ডেস্ক :
ঢালিউডে ভাড়ায় চালিত ভক্ত বা ক্যাডারের কথা বেশ পুরনো। তবে সেটি এতদিন আটকে ছিল এফডিসির চার দেয়ালে নির্বাচনি ক্যাওয়াজে কিংবা সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পর্দার আড়ালে। এবার সেই ‘ভাড়াটে’ ভক্ত বা দর্শক হাজির দিনদুপুরে রাজধানীর অভিজাত মাল্টিপ্লেক্সে! ভাড়ায় চালিত বিষয়টি এই পর্যন্ত থাকলেও খুব বেশি প্রতিক্রিয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সেই ভাড়াটে দর্শকরা যখন আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের ক্যামেরা-ট্রাইপড-বুম কেড়ে নিয়ে হেনস্তা করে এবং নারী সাংবাদিকদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে; বিপত্তিটা বাধে তখনই। বিস্ময়ের সুযোগ নেই, ঘটনাটি এখন বাস্তব। শুধু অভিযোগ নয়, স্পষ্ট অভিযোগ-প্রমাণ রয়েছে- ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এমন নজির সৃষ্টি হয়েছে রোববার বিকাল ৪টার দিকে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সের লবিতে।
যেখানে হাজির ছিলেন ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘কিল হিম’ ছবির নায়ক অনন্ত জলিল, অভিনেতা মিশা সওদাগর, প্রযোজক ও নির্মাতা মো. ইকবালসহ অনেকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও হেনস্তার শিকার জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র সাংবাদিক (গাজী টিভি) রাজন হাসান জানান পুরো ঘটনাটির চুম্বক অংশ। তার ভাষায়, ‘‘আমরা নিমন্ত্রিত হিসেবে আগেই সেখানে হাজির ছিলাম। কারণ, অনন্ত আমাদের জানিয়েছেন তিনি আসবেন, ছবিটি দেখবেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। যেটা যেকোনও ছবি মুক্তির পর রুটিন ওয়ার্কই বলা যায়। তো যথাসময়ে গিয়ে দেখি অনন্তকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বেশ কিছু ‘ভক্ত’ স্টার সিনেপ্লেক্সের বাইরে অপেক্ষা করছিল। তারা সিনেমাটা দেখেওনি। দেখে এটাও বোঝা যায়, তারা সিনেমার দর্শকও না। তো শুরু থেকেই তারা উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাজে বাধা প্রদান করে আসছিল।
এরপরও তারা ক্ষান্ত যায়নি। অনন্তকে ফুল দেওয়ার আয়োজনের সময়, ভিড়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নারী সহকর্মীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে কয়েক দফা। যাতে অত্যন্ত ঘৃণ্য একটি নজির সৃষ্টি হলো। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এছাড়াও সেই লোকজন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ট্রাইপড ও অন্য একটি চ্যানেলের বুম চুরি করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে একটি অনলাইন পোর্টালের বুম ভেঙে ফেলে। চলে তর্কবিতর্ক। এমন চিত্র ঢালিউড সিনেমা হলের সামনে অন্তত কেউ দেখেনি আগে। যেটা গত সোমবার ঘটে গেলো।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল প্রতিবাদ চলছে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। যদিও ছবির প্রযোজক-পরিচালক মো. ইকবাল বলছেন, লোক ভাড়া করে আনার অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। ছবিটি দেখতে আসা দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ায় ধাক্কাধাক্কি বেশি হয়েছে।
ওই ভিড়ের কবলে অনন্ত জলিলসহ তিনি নিজেও নাকি পড়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘কাল তো আমিও ভিড়ে আমার আংটি হারিয়ে ফেলেছি। আর লোক ভাড়া করে আনার যে বিষয়টি বলা হচ্ছে তা মিথ্যা। যারা এসেছে তারা নায়কের ক্রেজি ভক্ত। অনন্ত ভাইকে এক পলক দেখতেই তারা ছুটে এসেছে।’ হেনস্তার শিকার হওয়া একজন সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা অনন্ত জলিলের দাওয়াতেই ঈদের দ্বিতীয় দিন সিনেপ্লেক্সে দর্শকদের উপস্থিতি কাভার করতে যাই। সেখানে যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন তারা কেউ সিনেমার দর্শক নন, তারা অনন্ত জলিলকে স্যার ছাড়া কথা বলেন না। এ ছাড়াও তাদের আচরণ দেখে সবাই বুঝবে তারা যে ভক্ত না, অনন্তর গার্মেন্টকর্মী!’ সময় টিভির সাংবাদিক আল কাছির অনন্ত জলিল ও মো. ইকবালকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনারা সিনেমা হলে লোক আনবেন ঠিক আছে, কিন্তু পশুদের কেন আনবেন? সিসি ক্যামেরা দেখে পশুদের বিচারের আওতায় আনা হোক, শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
যতক্ষণ পর্যন্ত না করবেন ততক্ষণ আমরা আপনাদের বয়কট করলাম।’ এখানেই শেষ নয়, শাকিব খানের হাল ছেড়ে সদ্য অনন্তর পাল ধরা প্রযোজক ইকবাল সৃষ্টি করলেন নতুন রহস্য। রোববার বিকালের ঘটনা ফুঁসে ওঠার আগেই একই দিন মধ্যরাতে হাজির হলেন গুলশান থানায়! তাকে নাকি এদিন রাতে হত্যার হুমকি দিলেন অজ্ঞাত একজন। আর সে কারণে রাতেই গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি। যার নম্বর ১৩৮১। ডায়েরি থেকে জানা যায়, রোববার দিবাগত মধ্যরাত ২টার দিকে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ধারী একজন মো. ইকবালকে ফোন করে বড় ধরনের ক্ষতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপরই তিনি ছুটে যান গুলশান থানায়। সাধারণ ডায়েরিতে তিনি সেই ফোন নম্বরটি তুলে ধরেন।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ইকবাল বলেন, ‘কে বা কারা এই কাজটি করেছে, তা আমার জানা নেই। রাতে যেভাবে সেই লোকটি কথা বলেছে, মনে হয়েছে তারা কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে থানায় গিয়েছি।’ উল্লেখ্য, গত ঈদুল আজহাতেও ‘দিন দ্য ডে’ ছবির বেলায় ‘ভাড়াটে দর্শক’ এনে প্রেক্ষাগৃহে ভিড় বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে। তবে সেবার অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ