কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর মেয়াদোত্তীর্ণ সোনাহাট সেতুর পাটাতন ভেঙে ভারী যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে।
সেতুটি দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ যানবাহন। এতেই মাঝে মাঝে সেতুটির পাটাতন দেবে ও ভেঙে যাচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভারী যান চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে সোনাহাট সেতুর ইস্পাত অংশের পাটাতন ভেঙে একটি ট্রাক আটকে যায়। পরে অপর প্রান্ত থেকে আরেকটি ট্রাক এনে রশি বেঁধে আটকে পড়া ট্রাক টেনে তোলা হয়।
এরপর ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যান চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয় সেতুটির দুই পাড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ। ফলে সেতুর দুই পাড়ে ভারী যানের লম্বা সারি দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, পাথর বোঝাই ট্রাক যাওয়ার সময় সেতুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। এছাড়া সেতুটি এতো সরু যে একপাশ দিয়ে একটি ট্রাক গেলে অন্যপাশ দিয়ে যানবাহন যাওয়ার জায়গা থাকে না। এতে করে সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতি মাসে সড়ক বিভাগ সেতুটি মেরামত করে থাকে। এই মাসে হয়তো মেরামত করেনি। তাই পাটাতনটি ভেঙে গেছে।
তিনি আরও জানান, এই সেতু দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি না চললে স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে সরকার রাজস্ব হারাবে।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, সেতুটি দিয়ে রবিবার (২২ অক্টোবর) রাতে ওভার লোডের ট্রাক যাওয়ার কারণে পাটাতন ভেঙে গেছে। মেরামতের কাজ চলছে। সন্ধ্যার মধ্যে কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা অনেক পুরাতন সেতু হওয়ায় মাঝে মাঝেই পাটাতন ভেঙে যায়। সেতুটির দুইপাশে সাইনবোর্ডে উল্লেখ আছে যেন ১০টনের অধিক লোড নেওয়া না হয়। তারপরেও ৩০-৪০ টন লোড নিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি চলছে। অতিরিক্ত রোডের কারণে এই সমস্যাটা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৮৮৭ সালে লালমনিরহাট থেকে ভারতের গুয়াহাটি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর নির্মিত হয় ১২০০ ফুটের সোনাহাট রেলসেতু। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রবেশ ঠেকাতে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘদিন পর এরশাদ সরকারের আমলে সেতুটি মেরামত করে ভূরুঙ্গামারী দক্ষিণের তিন ইউনিয়ন এবং কচাকাটা ও মাদারগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সচল করা হয়।
নির্মাণকালে সেতুটির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০০ বছর। সেই হিসেবে সোনাহাট সেতুর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই।
নড়বড়ে সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সোনাহাট স্থল বন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি