কুমিল্লা জেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকেরা জমিতে চারা পরিচর্যা ও আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। কুমিল্লাসহ পাশের জেলাগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবেন এ জেলার কৃষকেরা।
সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি শিমগাছ, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং ও লালশাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা। তাই মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকেরা। কাকডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন সবজি পরিচর্যায়। বিকেল অবধি মাঠে থেকে চারার গোড়ায় পানি ঢেলে সবাই বাড়ি ফিরছেন। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে কোদাল চালাচ্ছেন, অনেকেই গাছের গোড়ালির পাশ দিয়ে ঘোরাচ্ছেন নিড়ানি। কেউবা খালি হাতেই গাছগুলো ঠিক করছেন। কেউ আবার নেতিয়ে পড়া চারার স্থলে সতেজ চারা প্রতিস্থাপন করছেন। এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মযজ্ঞ। বেড়েই চলছে কৃষকদের কাজের চাপ।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কৃষি অফিস আরও ২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষের ব্যাপারে কাজ করছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লার মাঠে শীতকালীন সবজি আবাদে ব্যস্ত চাষিরা। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বাড়ির আঙিনায় সবজি আবাদ করছেন। আর উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
চান্দিনা উপজেলার ছায়কোট গ্রামের কৃষক তমিজ উদ্দিন বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও তুলনামূলক কম। তবে সেবায় ক্রটি করা যাবে না। কিন্তু রোগবালাই দমনে সবজিতে কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। স্বল্প সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। এতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কমবেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব নয়। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই এসব কৃষক লাভজনক মনে করছেন। সবজির কদর সারা দেশেই রয়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজিতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সে জন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুণগতমানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানান তারা।
সূত্র জানায়, দেশের মোট সবজি চাহিদার একটা অংশ কুমিল্লার অঞ্চল থেকে যোগান হয়। এ অঞ্চলে শুধু মাঠে নয়, চাষিদের ঘরের আঙিনায় ও বহু চাষির উঠান জুড়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজি আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এবার শীতকালীন শাকসবজিসহ সব রকমের ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। প্রান্তিক চাষিদের মাঝে শীতের শাকসবজির মানসম্পন্ন বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ এবং উৎপাদন হবে।
—বাসস
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি