November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, November 3rd, 2023, 12:56 pm

কুলাউড়ায় পঞ্চম শ্রেণী পাস সনদ দিয়ে বাল্যবিয়ে, বরের পিতাকে জরিমানা, কাজীকে তলব

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পঞ্চম শ্রেণী পাস সার্টিফিকেট দিয়ে একটি বাল্যবিবাহ করার অপরাধে বরের পিতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১ নভেম্বর রাতে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বরের পিতাকে এই জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, লিয়াকত মিয়া ভূয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদ তৈরি করে বয়স গোপন করে গত ২৫ অক্টোবর তার ছেলে সাদেক মিয়া (২০) কে বিয়ের কাবিন করান। ৯৯৯ এর মাধ্যমে বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে ১ নভেম্বর বুধবার বিকেলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেখানে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সৌমিত্র কর্মকার ও কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি টিম। বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাইয়ের পর বাল্যবিয়ের সত্যতা পাওয়ায় বর সাদেকের পিতা লিয়াকত মিয়াকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, কনের বয়স আঠারো উর্ধ্ব থাকলেও বরের বয়স ২১ বছরের কম হওয়ায় স্থানীয় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী রফিকুল ইসলাম বর পক্ষকে এ বিয়ের কাবিন করাতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্র্তীতে বর পক্ষ জন্ম নিবন্ধনের কার্ড গোপন করে ভূয়া পঞ্চম শ্রেণী পাসের সনদ দেখিয়ে পাশর্^বর্তী রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার সৈয়দ লিয়াকত আলীর মাধ্যমে গত ২৫ অক্টোবর অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাল্যবিয়ের কাবিন সম্পন্ন করেন। কাবিনের এক সপ্তাহ পর ১ নভেম্বর গোপনে বর পক্ষ কনেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। বাল্যবিয়ের ঘটনাটি ৯৯৯ এর মাধ্যমে কুলাউড়া থানা পুলিশ জানতে পারে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলে তড়িৎ বরের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বরের পিতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কনে বর্তমানে বরের বাড়িতেই অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বরপক্ষ কিছুদিন পূর্বে আমার অফিসে আসলে ছেলের বয়স জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী পরিপূর্ণ না হওয়ায় আমি কাবিন পড়াতে অস্বীকৃতি জানাই। এ সময় ওই পক্ষ আমাকে কটাক্ষ করে চলে যায়।

কাবিন পড়ানো পাশর্^বর্তী রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কাজী সৈয়দ লিয়াকত আলী জানান, বরপক্ষ আমার কাছে জন্ম সনদের বিষয়টি গোপন করে পঞ্চম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট দিয়ে কাবিন রেজিস্ট্রারি করায়। এসময় তারা জন্ম সনদের কপি সার্ভারজনিত সমস্যার কারণে তাৎক্ষণিক জমা না দিয়ে পরবর্তীতে দিবে বলে জানায়। বিষয়টি নিয়ে আমাকে ধোকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মেহেদী হাসান জানান, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে সমাজের প্রতিটি নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিয়ে পড়ানো সংশ্লিষ্ট কাজীকে এ বিষয়ের কারণ জানতে তাকে তলব করা হয়েছে।