জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফানাই নদীর ওপর নির্মিত একটি গ্রামীণ সড়কের সেতু নদী পুনঃখননের পর ভেঙে ও দেবে গিয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে। এরপর থেকে দেবে যাওয়া সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিলেন ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। সর্বশেষ সেতুর উপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচলের পথটাও বন্ধ হয়ে গেল। গ্রামবাসীরা জানায়, শনিবার দিবাগত রাতে টানা ৫ ঘন্টা বৃষ্টি হয়। এতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও পানির প্রবল স্রোত ৮ জুন শনিবার দিবাগত রাতে সেতুর মাঝখান ভেঙ্গে নদীতে তলিয়ে যায়।
সেতু ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকার। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় রাউৎগাঁও ইউনিয়নের মুকুন্দপুর, কবিরাজি, একিদত্তপুর, বাগাজুড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। এছাড়া কবিরাজী-মুকুন্দপুর সড়ক, ভবানীপুর-নর্তন সড়কে ফানাই নদীর ওপর নির্মিত সেতুগুলোও রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। যেকোন সময় সেতু ভেঙ্গে যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফানাই নদীর ওপর ২০১১-১২ অর্থবছরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের সেতু কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাউৎগাঁও ইউনিয়নের পালগাঁও-মুকুন্দপুর যাওয়ার রাস্তায় কোরপান উল্ল্যাহর বাড়ির নিকট ৪০ ফুট প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ভবানীপুর-হেলাপুর সড়কে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর-নর্তন-তিলাসীজুড়া সড়কে একটি, মুকুন্দপুর-কবিরাজী সড়কে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম ও শামীম আহমদ জানান, পালগাঁও-মুকুন্দপুর এই আঞ্চলিক সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জরুরি কাজে সাধারণ মানুষ আসা যাওয়া করে। এছাড়া এলাকার স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এই সড়ক ব্যবহার করে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ, চৌধুরীবাজার জিএস কুতুব শাহ মাদ্রাসা, মাস্টার শরাফত আলীসহ বিভিন্ন স্কুলে আসা যাওয়া করে। ভারী বর্ষণে সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তারা আরো বলেন, নদী পুনঃখননের পর থেকেই সেতুগুলো দেবে গিয়েছে। এখন এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নতুন করে সেতু নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর আলী সোহাগ বলেন, গত বন্যার সময় সেতুটি ভেঙ্গে দেবে গিয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেতু নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেননি। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ফানাই নদীর দুইপারের মানুষ চলাচল করেন। এলাকার লোকজন কৃষিকাজে এই সেতু ব্যবহার করেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত যাতায়াত করতো। এখন সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার লোকজন চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। বিষয়টি উপজেলা এলজিইডি বিভাগকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) তারেক বিন ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. শরীফুল হক বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে সেতু ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি