জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি অপারেশন করেছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের একটি চৌকস দল। এসময় তাদের সাথে ছিলো সোয়াত ও জেলা এবং থানা পুলিশের একটি আভিযানিক টিম।
শুক্রবার রাত ৮টা থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে দুটি বাড়িতে জঙ্গি আছে। গোপন সেই সংবাদের ভিত্তিতে বাড়ীটি ঘিরে রাখে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার ভোরে অপারেশন হিলসাইড নামের সেই অপারেশনে যুক্ত হয় কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান ন্যাশনাল ক্রাইমের একটি আভিযানিক দল। তাদের সাথে ছিলো বোম ডিসপোজাল ইউনিট। এসময় অপারেশনে ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, ডেপুটি কমিশনার নাজমুল হক, যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, সোয়াট কমান্ডার জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া অভিযানে অংশ নেন জেলা পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মোহসিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল দীপঙ্কর ঘোষ, কুলাউড়া থানার ওসি মো: আব্দুস ছালেক সহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এ সময় সকালে সোয়াটের ২০/২২ জনের একটি দল অভিযানে যোগ দেয়।
প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা অভিযানে সেই দুটি বাড়িতে নারী পুরুষসহ ১০জঙ্গি ও তাদের সাথে থাকা তিন শিশুকে আটক করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে ৩ কেজি বিস্ফোরক, হাই এক্সক্লোসিভ ৫০ টি ডেটোনেটর, নগর ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ সামগ্রিক ও বিপুল পরিমান জিহাদী বই। আটকদের বাড়ি সাতক্ষীরা নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়। আটককৃত হচ্ছে শরীফুল ইসলাম (৪০), পিতা-ওমর আলী, মাতা-ছমিরুন, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা ও জেলা-সাতক্ষীরা। হাফিজ উল্লাহ (২৫), পিতা-আবুল কাশেম, মাতা-জহুরা খাতুন, সাং-কানলা, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ।
খায়রুল ইসলাম (২২), পিতা-নজরুল ইসলাম, মাতা-সানোয়ারা বেগম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। রাফিউল ইসলাম (২২), পিতা-সাইফুল ইসলাম, মাতা-রেবা সুলতানা, গ্রাম-মাইজবাড়ী, থানা-কাজীপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ। মেঘনা (১৭), স্বামী-খায়রুল ইসলাম, পিতা-মানিক মিয়া, মাতা-আলেয়া বেগম, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। আবিদা (১২ মাস), পিতা-খায়রুল ইসলাম, মাতা-মেঘনা, গ্রাম-রসুলপুর, থানা-ফতুল্লা, জেলা-নারায়নগঞ্জ। শাপলা বেগম (২২), পিতা-মজনু মল্লিক, স্বামী-আঃ ছত্তার, মাতা-আলেয়া বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। জুবেদা (১৮ মাস), পিতা-আঃছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। হুজাইফা (০৬), পিতা-আঃছত্তার, মাতা-শাপলা বেগম, গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-আটঘরিয়া, জেলা-পাবনা। মাইশা ইসলাম (২০), পিতা-সাইদুল ইসলাম, স্বামী-সোহেল তানজীম রানা, গ্রাম-চাদপুর (পিতার বাড়ী), থানা ও জেলা-নাটোর। মোছাঃ সানজিদা খাতুন (১৮), পিতা-আব্দুল জলিল, স্বামী-সুমন মিয়া, গ্রাম-নিজবলাই, থানা-শরিয়াকান্দি, জেলা-বগুড়া। আমিনা বেগম(৪০), পিতা-জলমত খা, স্বামী-শফিকুল ইসলাম, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা।
মোছাঃ হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), পিতা-শফিকুল, মাতা-আমিনা বেগম, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। এদিকে এলাকাবাসীরা বলেন, তারা মাস দেড়েক আগে এখানে জায়গা কিনে বাড়ী কিনেন। বেশ কিছু লোকের আনাগোনা থাকতো। তবে তারা কি কাজ করতেন সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি এলাকাবাসী। তবে তারা জানিয়েছেন তারা কথা বার্তা চলাফেরা সন্দেহজনক ছিলো। আটককৃতদের ঢাকায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সিটিটিসির প্রধান মো: আসাদুজ্জামান জানান, তারা সম্প্রতি ঢাকায় একজন জঙ্গিকে আটক করেন। তারা ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একটি জঙ্গি সংগঠন করেছে বলে জানায় এবং সেটির একটি আস্তানা গড়েছে এই কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিউলি পাহাড়ি এলাকায়। সেই খবরের ভিত্তিতে এখানে অভিযান চালানো হয় বলে তিনি জানান।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম বার জানান, আটককৃতদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করে ঢাকায় মামলা থাকায় নেয়া হচ্ছে। কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, তার ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালী বাড়ি নামক পাহাড়ী এলাকা এরা বসতি শুরু করে। কিভাবে এখানে এসেছে তা নিশ্চিত নয়। বসতি খুব বেশি দিন না হওয়ায় জানাজানিও হয়নি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক