জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্কুল এন্ড কলেজের বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মিত ছাদ ঢালাই কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের লোকজন ছাদ ঢালাইয়ের পর ঢালাই থেকে উপরের দিকে বের হওয়া রডের অংশ সিমেন্ট দিয়ে ভরাটের মাধ্যমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এতে অভিভাবক মহলসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
ম্যানেজিং কমিটির লোকজন বলেন, নির্মাণকাজ শেষে এই ভবনে শত শত শিক্ষার্থীর পাঠদান চলবে। কাজে অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বরমচাল স্কুল এন্ড কলেজের উর্দ্ধমুখী ভবন নির্মাণ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কাজটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পেয়েছেন শ্রীমঙ্গলের দেবাংশু সেন নামের এক ঠিকাদার। ইতিমধ্যে বিদ্যালয় ভবনের ছাদ ঢালাই পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রমজান মাসের পূর্বে ভবনের ছাদ ঢালাই দেয়া হয়। ঢালাই শেষে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির লোকজন দেখতে পান ছাদের ঢালাই অংশ থেকে রড বের হয়ে গেছে। এছাড়া ছাদের মধ্যখানের ঢালাই অনেকটা উচুঁনিচু রয়েছে বৃষ্টি আসলে ছাদের মাঝখানে পানি জমবে। এতে কমিটির লোকজন সন্দেহ করছেন ঠিকাদারের লোকজন তড়িঘড়ি করে কাজটি করেছেন। তারা বলেন, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর পরামর্শ ছাড়া এই কাজ আর শুরু করতে দেবেন না। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে অনিয়মের খবর পেয়ে কাজ দেখতে যান উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ মোঃ রাহি। এসময় তিনি কাজটি মেরামত করে দেয়া হবে বলে কমিটির লোকদের জানান।
ম্যানেজিং কমিটির লোকজন জানান, কাজ শুরুর পর থেকে ঠিকাদারের লোকজন সিডিউল অনুযায়ী প্রতি এক বস্তা সিমেন্টের সাথে দুই টুকরী সারি বালু ও দুই টুকরি স্থানীয় বালু দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢালাইয়ের মালামাল মিক্সিংয়ের সময় শ্রমিকরা শুধু লোকাল বালু দিয়ে কাজ করেছেন। তখনই স্কুলের কমিটির লোকজন বাঁধা দেন। তারপরও কথা না শুনে কাজ করে যান ঠিকাদারের লোকজন। বিষয়টি আড়াল করার জন্য রড বের হওয়া অংশ কোনোরকমে সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করে আড়াল করার চেষ্টা করেন ঠিকাদারের লোকজন।
বিদ্যালয়ের দপ্তরী শহীদ খান অভিযোগ করে বলেন, কাজের শুরুর দিকে ভবনের সিড়ি ঢালাইয়ে সিডিউল অনুযায়ী সারি বালু ও স্থানীয় বালু দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন সারি বালু না দিয়ে শুধু বড়ছড়ার বালু দিয়ে ঢালাই দিয়েছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আশরাফ চৌধুরী শিপু, তাজুল ইসলাম সাইকুল, মোঃ ফয়ছল হোসেন বলেন, ঠিকাদার শুরু থেকেই অনিয়ম করে চলছেন। সঠিকভাবে ভবনের ছাদ ঢালাই না করে তড়িঘড়ি করে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টাই অনিয়মের প্রমাণ। তিনি এর কারণ উদঘাটন করে যথাযথভাবে ছাদ নির্মাণের দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত মালাকার বলেন, ভবনের কাজ শুরুর পর থেকেই আমিসহ অন্য কয়েকজন শিক্ষকদের উপস্থিতিতে কাজ করানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের কোন গাফিলতি বা ত্রুটি দেখিনি। তাছাড়া নির্মাণকাজ দেখভালর জন্য বিদ্যালয়ের একটি কমিটি আছে। যদি কাজে কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার দেবাংশু সেনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুক উদ্দিন আহমদ সুন্দর বলেন, কাজের অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে অবগত করার তিনদিন পর প্রকৌশলী কাজ দেখতে এসেছেন। কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদার তার মনগড়াভাবেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা চাই সুন্দরভাবে কাজটি বাস্তবায়ন হোক।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ মোঃ রাহী বলেন, অনিয়মের খবর পেয়ে কাজটি পরিদর্শন করেছি। ঢালাইয়ের সময় সম্ভবত ব্লক সরে যাওয়ায় রড বের হয়ে গেছে এবং রডে চাপ খেয়ে একটু উঁচু হয়ে গেছে। এটা তেমন কোন সমস্যা না। এই ঢালাইয়ের উপরে আরেকটি দেড় ইঞ্চির ঢালাই হবে। তিনি আরো বলেন, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। ছাদ ঢালাইয়ের সময় কমিটির লোকজন ও বিদ্যালয় শিক্ষকদের সামনে ঢালাই দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি