April 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 1st, 2022, 6:49 pm

কুলাউড়ার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২৯ আগস্ট শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক পদে মোট ৭ জন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৪ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থীরা হলেন, মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান সোহেল, ছকাপন স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক অর্জুন চক্রবর্তী, জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাই ও মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের বরখাস্তকৃত মোঃ আইয়ুব আলীসহ মোট সাতজন। এরমধ্যে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মোঃ আইয়ুব আলীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ আছকর আলী। এছাড়া লিখিত অভিযোগে ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চারজন ইউপি সদস্যসহ আরো ৩৫ জন ব্যক্তি গণস্বাক্ষর করেন। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যানকে ।

নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খাঁন বাচ্চু, ডিজির প্রতিনিধি মৌলভীবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শতদল দে, শিক্ষানুরাগী সদস্য মাওলানা আবুল হাসান।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যাকে (আইয়ুব আলী) প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাবস্থায় শিক্ষার্থীদের সাথে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। এরকম একজন দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তিকে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মনোনীত করায় এলাকাবাসী এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। যৌন হুয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত ও বরখাস্তকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়োগ বোর্ড মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে এই নিয়োগ প্রদান করেছেন। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে কোন অবস্থায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় এলাকার লোকজন। সেই ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই তারা এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী যৌন হুয়রানির অভিযোগ এনে পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন প্রতিষ্টানের সভাপতির কাছে। অভিযোগে তারা বলেন, অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে নানা ধরণের শাস্তি বা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় কিংবা পরীক্ষায় প্রশ্ন বলে দেয়া ও মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড বা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সঙ্গে অপকর্ম (যৌন হুয়রানি) করেন। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসুচী করেন। এ নিয়ে প্রতিষ্টানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় কলেজ গভর্ণিং বডির সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে রেজ্যুলেশন করে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করা হয়।

অভিযোগকারী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ আছকর আলী বলেন, যাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুনেছি তিনি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছিলেন। যেটা অনেক গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। সেই ব্যক্তি আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। ওই শিক্ষকের অতীত ইতিহাস জেনে তাকে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে পারছি না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খাঁন বাচ্চু বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরখাস্তকৃত একজন শিক্ষককে কিভাবে আপনার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে ওই শিক্ষককে কি অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন সেটা আমাদের জানার বিষয় না। সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। নিয়োগ বোর্ড তাঁর সমস্ত কাগজাদি দেখে তাকে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষক দ্বারা আপনার প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা কি নিরাপদ মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক যদি ভালো থাকেন তাহলে শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্টান ভালো থাকবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, পরীক্ষার দিন সময়মত উপস্থিত হয়ে নিয়োগ কমিটির পাঁচজন সদস্য মিলে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষায় খাতায় কোড স্লিপ লাগিয়ে লিখিত পরীক্ষা শুরু করি। পরে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে ভাইবা পরীক্ষা শেষে প্রার্থীদের সার্টিফিকেট নাম্বার যোগ করি। সবশেষে ভাইবা ও সার্টিফিকেট নাম্বারের সাথে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার নাম্বার যোগ করে যে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়েছে তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ডিজি’র প্রতিনিধি ও মৌলভীবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হক বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ ছিলনা। নিয়োগ বোর্ডের সকল সদস্য ও পুলিশের উপস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষায় যারা নিয়োগ পাননি তারা এখন এই ধরণের অভিযোগ তুলছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।