এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:
লোকবল সংকটের অজুহাতে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া কুলাউড়া উপজেলার ৩টি রেল স্টেশন চালুর কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত ৭টি স্টেশনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ট্রেন ক্রসিং বিড়ম্বনা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টিলাগাঁও ও ভাটেরা রেলওয়ে স্টেশন প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ৩ মাস আগে থেকে লংলা স্টেশনটি বন্ধ হয়ে গেছে। আর মনু ও ছকাপন স্টেশনে একজন পোর্টার দিয়ে কোনমতে চালু রাখা হয়েছে। এদিকে ভাটেরা ও টিলাগাঁও এই স্টেশন দুটি চালুর দাবিতে একাধিকবার এলাকাবাসী ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। বিভিন্ন সময় আন্দোলন, অবরোধ এবং রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয়রা। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি আজও। তবুও বিষয়টিতে কার্যত কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র আরো জানায়, সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে কুলাউড়া স্টেশনের প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরত্বে লংলা স্টেশন অবস্থিত। সেখান থেকে আরো ১৫ কিলোমিটার দুরত্বে শমসেরনগর স্টেশন। প্রতিদিন এ রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর ৪ টি ট্রেনের ও লোকাল মেইল ট্রেন এবং পণ্যবাহী ক্রসিংয়ের জন্য লংলা স্টেশনকে ব্যবহার করা হতো। গত ৩ মাস আগে এই স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার রজত রায়কে সিলেটের মোগলাবাজার রেল স্টেশনে বদলি করে দেওয়ায় স্টেশনের কার্যক্রম সেখানকার সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে লংলা স্টেশনে ট্রেনের ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ওয়ানওয়ে লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় সিলেটমুখী যে কোনো ট্রেন শমশেরনগর স্টেশন থেকে ছেড়ে এলে এবং কুলাউড়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা বা চট্টগ্রামমুখী যেকোনো ট্রেনকে মধ্যবর্তী লংলা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ক্রসিং দেয়া হতো। বর্তমানে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শমশেরনগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সিলেটমুখী যেকোনো ট্রেনকে কুলাউড়া রেলস্টেশনে অথবা কুলাউড়া রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বা চট্টগ্রামমুখী ট্রেনগুলোকে শমশেরনগর স্টেশনে ক্রসিং নিতে হয়। উভয় স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। ক্রসিংয়ের জন্য আন্তঃনগর ট্রেন প্রায় আধাঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করতে হয়। এতে করে ট্রেন যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়েন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি স্টেশনই তালাবদ্ধ। যাত্রী সাধারণের নেই কোনো আনাগোনা। ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে কয়েকজন যাত্রী লোকাল ট্রেনের অপেক্ষা করছে। তাদের জানা নেই কখন আসবে সেই ট্রেন। যাত্রীরা জানায়, একসময় এসব স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট পাওয়া যেত। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনগুলো বন্ধ। ফলে ট্রেনে যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের অন্যতম টিলাগাঁও, মনু, ছকাপন ও ভাটেরা স্টেশনগুলো নিরব। নেই কোনো কোলাহল বা যাত্রী। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনগুলোতে।
লংলা স্টেশন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ বাদশা, কাওসার আহমদ কয়ছর, শেখ মহসিন, আব্দুল মতিন বলেন, তিন মাস ধরে মাস্টারের অভাবে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে থামলে যাত্রীরা মালামাল নিয়ে অনায়াসে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এখন স্টেশন বন্ধ থাকায় একমাত্র লোকাল মেইল ট্রেনটি মেইন লাইন দিয়ে এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়। এতে অনেক যাত্রী তাড়াহুড়ো করে উঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভাটেরা স্টেশন বন্ধ থাকায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ট্রেনে সিলেট যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই স্টেশনটি আমাদের অন্যতম বাহন ছিল। অচিরেই স্টেশনটি চালুর জন্য ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ডানকান ব্রাদার্সের বাগান ও এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে টিলাগাঁও ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল। বি-গ্রেডের স্টেশন টিলাগাঁওয়ে শুধু বাগানের মালামাল বুকিং করেই সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হতো। চা-বাগান বেস্টিত রেল স্টেশনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে এ স্টেশন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন আহমদ বলেন, তিন মাস ধরে লংলা স্টেশন বন্ধ থাকায় আন্তঃনগর সকল ট্রেনগুলো কুলাউড়া ও শমসেরনগরে ট্রেন যাত্রা বিরতি রেখে ক্রসিং করতে হয়। আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে লংলা স্টেশনে মাস্টার নিয়োগ হবে। টিলাগাঁও ও ভাটেরা স্টেশন চালুর বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন।
সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআইসি) তৌফিকুল আজিম জানান, সারাদেশেই বর্তমানে স্টেশন মাস্টার সংকট রয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেক স্টেশন মাস্টারের অভাবে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নতুন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। নিয়োগ শেষে ট্রেনিং দেওয়া হবে স্টেশন মাস্টারদের। আগামী ডিসেম্বরের আগে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত মাস্টাররা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে সহসাই এ সমস্যা সমাধান হবেনা।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি