November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 24th, 2022, 8:52 pm

কুলাউড়ায় বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরোধপূর্ণ জমি রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্কুলের সীমানা এলাকার ভিতরের একটি অংশে বসবাসরত একটি পক্ষের সাথে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে দখল পাল্টা দখল এবং জমির মালিকানা দাবি করে একে অপরের বিপক্ষে সালিশ বৈঠক করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। জমি নিয়ে জটিলতা থাকলেও উভয় পক্ষ কোনোরূপ সমঝোতায় না আসায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের জমি রক্ষায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ দখল মুক্তকরনের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা ভাবে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে বিদ্যালয়ের বিরোধপূর্ণ জমিতে প্রতিপক্ষ সামিনা খাতুন গং কর্তৃক বেড়া দেয়ার চেষ্ঠাকালে বিদ্যালয়ের প্রায় চারশত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে আপত্তি জানায়। শিক্ষার্থীরা “বিদ্যালয়ের জায়গায় বেড়া দিতে দেব না” ও অবৈধ দখল মুক্ত করণের দাবি জানিয়ে প্লেকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানায়। দুপুর ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ব্যাপি চলে এ কর্মসূচী। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশংকায় পুলিশ উভয়পক্ষকে সতর্ক করে দেয় এবং কোনোরূপ সংঘাতে না জড়িয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী মেহেরুন্নেছা খাতুন চৌধুরী এলাকার নারী শিক্ষার বিস্তারে সুলতানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১০৩ শতাংশ জমি দান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়ের নামে ওই জমি রেকর্ড হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ বিদ্যালয়টি ২০২০ সালে এমপিওভুক্ত হয় এবং প্রায় ৪৬৫ শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনে একটি একাডেমিক ভবন অনুমোদন হয়। যে স্থানে নতুন ভবনের কাজ শুরু হওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে সেই স্থানেই বিদ্যালয়ের ১০৩ শতক মোট জমির একটি অংশে প্রায় ১৭ শতক জমিতে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত রজব আলীর স্ত্রী সামিনা খাতুন গংরা পরিবারের ২০/২৫ জন সদস্যসহ বসবাস করে আসছেন। ওই ১৭ শতক জমি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সামিনা খাতুন গং এর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ দীর্ঘদিনেও নিরসন হয়নি। এ নিয়ে একাধিক সমঝোতা বৈঠকে স্কুলের সীমানা এলাকা থেকে অন্যত্র সামিনা খাতুন গং কে সমঝোতার মাধ্যমে বিনিময় করে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিলে আজও আলোর মুখ দেখেনি উভয় পক্ষের ছাড় না দেওয়ার কারণে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা চৌধুরী এবং দাতা পরিবারের সদস্য শিক্ষক আবু জাবেদ পাপ্পু বলেন, এ অঞ্চলের একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়েছে এবং একটি নতুন ভবনের অনুমোদন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত এই স্থানটি অবৈধ ভাবে একটি পক্ষ দখল করে রেখেছে। বিদ্যালয়ের এই ভবনটি নির্মাণ হলে শ্রেণি কক্ষের সংকট কমবে। আমরা প্রয়োজনে দাতা পরিবারের সাথে কথা বলে অন্যত্র জমি দিয়ে ওই পক্ষকে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছি।
বিরোধপূর্ণ জমিতে বসবাসকারী পক্ষের সামিনা খাতুন ও তামিম আহমদ বলেন, দাতা কর্তৃক মৌখিক ক্রয় বলে দীর্ঘদিন থেকে ৩৬ শতক জমিতে আমাদের পরিবারের ২০/২৫ জন লোকজন বসবাস করে আসছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ ও বেড়া নির্মাণ সহ অন্যান্য কাজ করতে বাধা প্রধান করে। এ নিয়ে আমরা আদালতে সত্ত্ব মামলা দায়ের করেছি (মামলা নং -১৯৩/২১)। অন্যত্র স্থানান্তরে করে জমি দেওয়ার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা বর্তমানের বাজারে অনেক কম মূল্যের।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছে। একটি মহলের ইন্দনে একটি বিশেষ মহল বিদ্যালয়কে ধ্বংসের পায়তারা করছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইলিয়াস আলী চৌধুরী জানান, বিদ্যালয়টি এখন সরকারের, আমরা অনেক যোগাযোগ করে একটি ভবন পেয়েছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভবনের কাজ শুরু হলেও স্কুলের জমিতে অবৈধ দখলদাররা থাকার কারণে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। বিদ্যালয়ের জমির জটিলতার কারণে একাডেমিক ভবন ফেরত গেলে স্কুলের অনেক ক্ষতি হবে। বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জিমিউর রহমান চৌধুরী জানান, উভয়পক্ষকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটিয়ে আলোচনার মাধ্যেমে বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে উভয়পক্ষের দেওয়ানী মামলা চলমান রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিব। আইনশৃংখলা রক্ষায় উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহবান জানিয়েছি।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, আমি যতটুকু জানি, যিনি স্কুলে জমি দান করেছেন তিনিই প্রকৃত মালিক। আর এখন যারা জমির মালিকানা দাবি করছেন তারা হয়তো একটি জাল দলিল সৃষ্টি করে জমির মালিকানা দাবি করছেন। বিষয়টি সমাধানের স্বার্থে উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হবে।