April 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 20th, 2022, 9:16 pm

কুলাউড়ায় বৃদ্ধা দাদিকে পেটালেন নাতি

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

বাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জেরে সত্তোর্ধ্ব বৃদ্ধা দাদিকে বেধড়ক পেটালেন নিজের পাষন্ড নাতি। আর এ ঘটনার সময় শাশুড়িকে রক্ষা না করে ছেলের পক্ষ নিয়ে ভিডিও ধারণ করে শাসালেন পুত্রবধু (ওই যুবকের মা)। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর লস্করপুর এলাকার। মারধরের শিকার ওই বৃদ্ধা লায়লী বেগম পৌর এলাকার উত্তর লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা। আর মারধরকারী যুবক বৃদ্ধার ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী জয়নাল মিয়ার ছেলে। সে সিলেট এমসি কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অনার্সে পড়াশোনা করছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় মারধরকারী নাতি আব্দুস সামাদসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে রোববার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধা লায়লী বেগম।
পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেয়ে আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেয়ে অভিযোগটি মামলায় এজাহারভুক্ত করা হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ওইদিনের মারধরের একটি ভিডিও মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছায়। ভিডিও ও থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পৌর এলাকার উত্তর লস্করপুরের বাসিন্দা মৃত সুলতান মিয়ার স্ত্রী লায়লী বেগমের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছেন। বড় ছেলে সৌদি আরব প্রবসী জয়নাল মিয়া কয়েক বছর আগে মা লায়লী বেগমের নামে থাকা সম্পত্তি সমান অংশে ভাগবাটোয়ারা করার কৌশল দেখিয়ে ৫.৪১ শতক জমি নিজের নামে লিখে নেন। পরে বৃদ্ধা মায়ের দেখাভাল না করে জয়নালের স্ত্রী আমিনা বেগম বোনদের (বৃদ্ধার মেয়েদের) ঘরে দিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিসী বৈঠকও হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার জয়নালের পুত্র ও বৃদ্ধার নাতি আব্দুস সামাদ বাড়িতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এতে বাধা দিতে যান বৃদ্ধা লায়লী বেগম। তখন সামাদ উত্তেজিত হয়ে তাঁর মা আমেনাসহ তাদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে লায়লী বেগমের ওপর চড়াও হোন। একপর্যায়ে সামাদ তাঁর দাদিকে টেনে হিঁচড়ে এলোপাতাড়ি লাথি-ঘুষি দিতে থাকেন এবং ধাক্কা দিয়ে মাঠিতে ফেলে দেন। কিন্তু পরিবারের কেউ এসে তাকে রক্ষা করেনি। ভিডিওতে আরো দেখা যায়, লায়লী বেগমকে তখন সামাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা কেউ উদ্ধার না করে উল্টো টেনে হিচড়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় সামাদের মা আমেনা শাশুড়িকে উদ্ধার না করে উল্টো ভিডিও ধারণ করে বৃদ্ধার মেয়েদেরকে শাসিয়ে বলেন, মেয়েরা কেন সেখান থেকে লায়লী বেগমকে সরিয়ে নিচ্ছেনা। সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে বাধা দিতে মেয়েরা লায়লী বেগমকে পাঠিয়ে তামাশা দেখছে।
অভিযুক্ত নাতি আব্দুস সামাদ মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, গত ৯ মাস ধরে জায়গা নিয়ে দাদীর সাথে আমাদের পারিবারিক বিরোধ চলছে। প্রায় ৯ বছর ধরে আমার দাদীর সাথে ভালো সম্পর্ক নেই। তিনি আমার ফুফুদের কাছে আছেন। এই ফুফু ও আমার দাদীর ভাইদের কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছেনা। আমাদের জায়গার ওপর দেয়াল নির্মাণ করতে গেলে দাদি ও আমার ফুফুরা এতে বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়। শুক্রবার দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করলে দাদি বাধা দিতে আসেন। এ জন্য তাঁকে সরিয়ে দিয়েছি, কোন মারধর করিনি। তবুও এ ঘটনায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর হারুনুর রশীদ বলেন, জমি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আমরা বৈঠকে বসে দুই পক্ষকে জায়গা আলাদা করে দিয়েছিলাম। বৃদ্ধাকে অন্যায়ভাবে মারধরের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সুন্দর একটি সমাধানের জন্য আবারো সরেজমিন তাদের বাড়িতে যাবো।
কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: আনোয়ার মিয়া বলেন, অভিযোগ পেয়ে অনুমতির জন্য আদালতে পাঠিয়েছি। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, মারধরের ভিডিওটি আমি দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে এসআই আনোয়ারের সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে দ্রæত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।