November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, May 19th, 2022, 8:35 pm

কুলাউড়ায় সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক, চোরাচালান রোধকল্পে বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার বৃদ্ধি করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এরই সাথে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। নিউ নেশনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কুলাউড়ার সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান রোধকল্পে সীমান্ত এলাকার দুটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে নিয়ে জনসচেতনতা মূলক বিট পুলিশিং সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মুড়াইছড়া বাজারে কুলাউড়া থানা পুলিশ এ সভার আয়োজন করে। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায়ের সভাপতিত্বে ও ওসি (তদন্ত) মো: আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় বিট পুলিশিং সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কুলাউড়ায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে যারা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অপরাধ দমনে সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় এলাকার মানুষ তথ্য দিয়ে বিজিবি ও পুলিশকে সহযোগিতা করে এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় রাত্রিকালীন পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে সীমান্তের ওপাশ থেকে আর যেন নতুন করে কোন রোহিঙ্গা দেশে অনুপ্রবেশ না করতে পারে। তথ্য দিয়ে যারা এই দায়িত্ব পালন করবেন তারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক থাকবে এবং পুলিশের কাছে জনবান্ধব হিসেবে চিহ্নিত হবেন। যারা তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন না, দালাল ও চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল অন্যায় ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করা আমাদের সকল নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এসময় পুলিশ সুপার কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে আরো বলেন, সীমান্ত এলাকায় যারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছেন তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের অতীত কর্মকান্ড যারা চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পুনরায় দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় সীমান্তের ওই পাশের দালালের সাথে এপাশের দালালদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং যারা এই কাজে সহযোগিতা করবে তারা কঠোর আইনী ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমরা ট্রেডিশনাল আইন প্রয়োগ করবো না রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর আইনগুলো প্রয়োগ করবো।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ, পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এম জিমিউর রহমান চৌধুরী, কর্মধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মছদ্দর আলী, ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং, আব্দুল মতিন, আব্দুল কাদির, মশাহিদ আলী, মুড়ইছড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উস্তার মিয়া প্রমুখ।

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মো: আব্দুল হাই, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো: বদিউজ্জামান, কুলাউড়ার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল ইক, ডিএসবির ইন্সপেক্টর মো: রজিউল্লাহ খান, আলীনগর বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার নজরুল ইসলাম, মুড়াইছড়া বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল হান্নানসহ বিজিবি ও থানা পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া সীমান্তের সেই আলোচিত ১৮৪৬ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার যে এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছিল সেই এলাকা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।

প্রসঙ্গত, কুলাউড়ার কর্মধা ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর-মুড়াইছড়া সীমান্তের ১৮৪২-১৮৫১ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মাদকদ্রব্য ও বিভিন্ন চোরাচালান আসতো। এছাড়া কুলাউড়ার চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বৈধভাবে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকার কারণে এই দুই সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ বাড়ে। নতুন করে আলোচনায় যুক্ত হয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। এই কাজের সাথে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন চোরাকারবারীরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন। অর্থের বিনিময়ে বিজিবির তালিকাভুক্ত ও এলাকার চিহ্নিত ১৫-২০ জন চোরাকারবারিরা এসব কাজে সক্রিয় রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। শিকড়িয়া সীমান্তের ১৮৪৬ নং সীমানা পিলারের ভারতের পাহাড়ি সেগুন টিলা এলাকা দিয়ে চোরাচালান ও পাচারকারীরা বেশ সক্রিয় রয়েছে। পৃথিমপাশার শিকড়িয়া সীমান্ত দিয়ে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১২ মে পর্যন্ত ৩৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ।