November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 11th, 2022, 8:21 pm

কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে লোডশেডিং, দুর্ভোগে ১ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি গ্রাহক

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় প্রতিদিন ১২-১৪ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল ও বড়লেখা জোনাল অফিসের অধীনে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়াও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যও লোডিশেডিং ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে রয়েছেন গ্রাহকরা।

সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, চাহিদার চেয়ে তিনভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ফিডারভিত্তিক (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন একটি এলাকা) লোডশেডিংয়ের সময়সূচি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এক ঘণ্টা পর পর এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ সংকট আরো বেড়েছে। একটানা দুই-তিনঘন্টা করে দিনে প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। শহরের বাইরে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় এ সংকট আরো বেশি।

বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র কুলাউড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় কুলাউড়াসহ জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া জুড়ী উপকেন্দ্র থেকে বড়লেখার আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি ১১ কেভি ফিডার ও দুটি ৩৩ কেভি ফিডার লাইন আছে। কুলাউড়ায় গ্রাহকের সংখ্যা ৩২ হাজার ২০০। আর জুড়ীতে তিনটি ১১ কেভি ও দুটি ৩৩ হাজার কেভি ফিডার লাইন রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। বড়লেখা উপজেলার আংশিক এলাকায় গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১০০০। তিন উপজেলায় প্রতিদিনের চাহিদা বর্তমানে ১৮ মেগাওয়াট। সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৭-৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়ার জয়চন্ডী, পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন ৪৮ হাজার। প্রতিদিন বিদ্যুৎয়ের চাহিদা রয়েছে ৮ মেগাওয়াটের বেশি। সেখানে বর্তমানে ২ থেকে আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় মোট গ্রাহক রয়েছেন ৮০ হাজার। তন্মধ্যে জুড়ীতে ১৮ হাজার ও বড়লেখায় ৬২ হাজার গ্রাহক রয়েছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সময়সীমা এক ঘণ্টা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। দিনে-রাতে প্রতিবার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। গত এক সপ্তাহ থেকে বিদ্যুৎ সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠেছে। লোডিশেডিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটছে।

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম. আতিকুর রহমান আখই বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে রাত আটটায় দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে। সকালে দোকান খোলার পর দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আগে পৌর শহরে কম লোডশেডিং হতো। বর্তমানে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের সাথে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে সেই নির্দেশনাটি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়াতে হবে। তা না হলে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ যেকোন সময় বিক্ষোভে নামবে। তাছাড়া বিদ্যুৎ এর চলমান সংকট দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম নাজমুল হক তারেক বলেন, আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ৮ মেগাওয়াটের বেশি, পাচ্ছি ২-৩ মেগাওয়াট। বর্তমানে ৬ ঘন্টারও বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের সময় ১২ ঘন্টার লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল অফিসের এজিএম আশরাফুল হুদা বলেন, আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, পাচ্ছি ৮ মেগাওয়াট। ১১-১২ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কখনো পাচ্ছিনা। তাই দিনে গড়ে ৮-৯ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

বিউবো কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণী বলেন, আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, পাচ্ছি ৮ মেগাওয়াটের কম। দিনে এবং রাতে সবক’টি ফিডারে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। গরমের সময় চাহিদা বেশি থাকায় লোডশেডিংও বেশি করা হচ্ছে। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে সবক’টি ফিডারের গ্রাহকদের চাহিদাকে মাথায় রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখার চেষ্টা করছি। লোডশেডিং কতদিন চলবে সেটা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।