September 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 26th, 2024, 9:29 pm

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ৩৪ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি, তলিয়ে গেছে ফসলের খেত

নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট হওয়া ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে প্রমত্তা পদ্মা। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৩৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিম্নাঞ্চলের জমিতে চাষ করা মাসকলায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সঙ্গে মরিচ, কলাসহ অন্যান্য সবজির খেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ২৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমির মাসকলাই পানিতে ডুবে গেছে। এতে অন্তত ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তাছাড়া মরিচ ৭০ হেক্টর, কলা ৭৩ হেক্টর ও সবজি ১৩ হেক্টরের মতো পানিতে ডুবেছে যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে কৃষি অফিস। এছাড়া এবার চরের ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে মাসকলাই চাষ করেছিলেন কৃষকেরা।

বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে যা দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। এতে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার যা নিশ্চিত করেছে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগ।

ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় চার ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৩৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙন ও বন্যার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

এদিকে নদীর পানি কমা নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) পর থেকে আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। দু-এক দিন স্থিতিশীল থেকে পানি কমতে শুরু করবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আর পানি বাড়েনি।’

এদিকে চিলমারী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তলিয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। ডুবেছে মরিচা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী এলাকার চরের ফসল ও আবাদি জমি। এর আগে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে পানি বাড়লেও শেষের দিকে কমতে শুরু করে। তবে ফের পানি বাড়তে শুরু করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে।

এদিকে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান জানান, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৮টি গ্রামের আশপাশে পানি চলে এসেছে। চলাচলের রাস্তার ওপরে পানি উঠে গেছে। তবে এখনো বসতঘরে পানি প্রবেশ করেনি। চরের আবাদি জমি সব ডুবে গেছে।’

রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে এসেছে। তাদের ইউনিয়নের পদ্মার চরের প্রায় সব আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। এতে মাসকালাই চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চরে পানিবন্দি হয়ে পড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে তা পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো এখনো স্বাভাবিক আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়া এলাকাগুলোর খোঁজ-খবর রাখছি।’

——ইউএনবি