November 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 26th, 2023, 9:53 pm

কুড়িগ্রামে এক টাকার রেস্টুরেন্ট!

দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার চালু হলো এক টাকার রেস্টুরেন্ট।

এক টাকায় শহরের রেস্টুরেন্টের খাবার পেয়ে খুশি হতদরিদ্র মানুষেরা।

দেশের প্রেক্ষাপটে বাজারে এক টাকা এখন নেহাত মূল্যহীন। প্রায় বিলুপ্তির পথে এক টাকার নোট। দোকানিরা এর চাহিদা সারেন চকলেট দিয়েই। কিন্তু এক টাকায় রেস্টুরেন্টের খাবার অবিশ্বাস্য।

সত্যি এমন ব্যতিক্রম আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

দারিদ্র্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্থায়ীভাবে বিশেষ একটি রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে।

এক টাকার এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাচ্ছে বিরায়ানি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ বারো পদের খাবার।

যা ক্ষুধার্ত মানুষেরা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছা মতো তাদের পছন্দের খাবার খেতে পারছেন। মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে তৃপ্তি সহকারে পছন্দের খাবার খেতে পেরে খুশি সুবিধাভোগীরা। দ্রব্যমূল্যের এমন উর্দ্ধগতির বাজারে সমাজে এমন অনেক অসহায়, দরিদ্র এবং গৃহহীন মানুষ তিনবেলা খাওয়া কষ্টকর।

সেখানে শহরের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু এক টাকার বিনিময়ে পেট পুড়ে খেতে পেরে খুশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদিরদ্র এসব মানুষ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আধুনিক ঘরোয়ানা এই রেস্টুরেন্টটি নিশ্চিত করেছে খাবার খাওয়ার এক মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

যেখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার।

রেস্টুরেন্টটিতে ৫০ জন মানুষের বসে খেতে পারবে। আর একদিনে ৫০০ মানুষ খাবার আয়োজন করা হয়েছে।

বিনা পয়সা না খেয়ে টাকার বিনিময়ে খেতে পেরে আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মতৃপ্তি মুখের হাসি বড় পাওয়ায়। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে।

তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্ট চালানো সম্ভব। ঢাকা, কক্সবাজারের পর কুড়িগ্রামে চালু হলো এক টাকার এই রেস্টুরেন্ট।

সুবিধাভোগী ছকিনা বেগম বলেন,এক টাকার রেস্টুরেন্টে নাতি-নাতনি, বিয়াইন, বোন সহ আসছি। হামরা গ্রামের মানুষ কোন দিন চিন্তা করতে পারি নাই যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খামো।

আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি হয়েছে।

সুবিধাভোগী সত্তোর উর্দ্ধো বৃদ্ধা কাশেম আলী বলেন, বাবা মোর বয়স মেলা হইছে। কোন দিন টাকার অভাবে বড় বড় হোটেলে খাবার খেতে পারি নাই। চা-বিস্কুট পাঁচ টাকা দিয়ে খাইছি। এখন জিনিস পত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না। কিন্তু বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামী খাবার খেতে পারবো ভাবতেই পারিনি।

এক টাকায় মন মতো খেতে পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।

সুবিধাভোগীদের মধ্যে বুলবুলি আক্তার নামে একজন বলেন, বাচ্চা নিয়ে এসেছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টি খেলাম। কামলা দেয়া সংসারে শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও চার থেকে পাঁচ শত টাকা খরচ হতো।

কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, আজ জীবনে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সায়। এতে করে উপলব্ধি করতে পারবো যারা নিয়মিত হোটেলে ওয়েটার, বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো শ্রম। সত্যি আমি বেশ গর্বিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কষ্ট করতে পেরে।

স্বেচ্ছাসেবক প্রধান আকরুম হোসেন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের খুঁজে বের করে তাদের টোকেন দেয়। পরে তারা এসে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সুবিধা নেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষ এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেয়া সম্ভব।

কুড়িগ্রামে এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় এই ধরনের কার্যক্রম চালু করা গেলে ক্ষুধায় মানুষের কষ্ট থেকে মুক্তির পাশাপাশি পুষ্টিজনিত অভাবের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে এই জনপদের মানুষের।

—-ইউএনবি