April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 26th, 2022, 9:00 pm

কুড়িগ্রামে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি

কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গ্রামীণ ও চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাত হাজার কৃষক। পুরো পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, চলতি বন্যায় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান আছে।

তবে সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ বানভাসিদের দুর্ভোগ কমাতে পারেনি। অনেক চরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শৌচাগার ও গো খাদ্যের তীব্র সংকট রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩২৫টি স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।

নদী ভাঙ্গা মানুষের বিলাপ

ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে অবস্থিত হকের চর। নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দু’দিনে এখানকার ৯টি পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে আমিনুল মিস্ত্রী (৬০) ও আলহাজ মিস্ত্রী (৩৫) বাড়ি-ঘর নৌকায় তুলে যাচ্ছেন গুজিমারীর চরে। মাঝ নদীতে দেখা মেলে এ দু পরিবারে সঙ্গে।

তাদের বাবা রফিকুল মিস্ত্রী (৮০) নৌকার ছইয়ের উপর বসে উদাসভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন। পরিবারের মহিলা ও শিশুরা ছইয়ের ভেতরে। আর পুরো নৌকাজুড়ে দুটি পরিবারের ঘরের চালসহ অন্যান্য আসবাবপত্র। কয়েক দফায় এসব মালামাল স্থানান্তর করতে হবে। এটি ছিল প্রথম ধাপ। এ জন্য নৌকা ভাড়া বাবদ দিতে হবে পুরো আট হাজার টাকা। এমনটাই জানালেন রফিকুল মিস্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র রাক্ষসী রূপ ধারণ করে পাকদিয়ে ভাঙ্গা শুরু করে। দু’দিনে আমার দু’ছেলের বাড়িসহ ৯ জনের বাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়। সবাই এখন খোলা আকাশের নীচে। গুজিমারীর চরের বাবু’র ১২শতক জমি ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছে আমার দু’ছেলে। ওইখানে যাচ্ছি নতুন ঠিকানা গড়তে। পেশায় সবাই রাজমিস্ত্রী (কাঠের কাজ করেন)।

হকের চরের ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব মাইদুল, মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ দফাদার, আম্বর আলী, আনোয়ার আলী ও মুকুল এখনও মাথা গোজার ঠাঁই পায়নি।

আনন্দ বাজারে মানুষের আনন্দ নেই

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দুর্গম চর বাগুয়া। চারপাশে নদী, এ চরে নেই স্কুল বা হাটবাজার। তাই এলাকার জুরান, মজিবর শেখ ও কুরফান দেওয়ানী মিলে তিন একর জমির উপর গত বছর অক্টোবর মাসে আনন্দ বাজার নামে হাট বসায়।

আনন্দ উৎসবে যে বাজার বসায় এলাকাবাসী বছর না ঘুরতে নদীর বাঁক বদলে যে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে সবার আনন্দ উবে যায়। এ বাজারে বিভিন্ন ধরণের ৩৫টি দোকান ঘর ছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভেঙে গেছে ১৫টি।

এসব ব্যাপারে কথা হয় সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু সায়েমের সঙ্গে।

তিনি দাবি করেন, গুজমারী চরে পাঁচটি গ্রাম। গ্রামগুলো হলো-গুজিমারী, হকের চর, কাজিয়ার চর, জোদ্দার পাড়া ও পূর্ব পাড়া। প্রায় তিনহাজার মানুষের বসবাস হলেও এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা দিতে পারেননি কারণ অপ্রতুল ত্রাণ এবং দুর্গম এলাকা। চলতি বন্যায় এখানকার ১৫১টি পরিবার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে মর্মে তালিকা করে ইউএনওকে দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্য সেবা সংকট, নেই ত্রাণ

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদে অবস্থিত বাবুর চর। এখানকার কৃষিশ্রমিক সাইফুল জানান, বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে হাতে কোন কাজ নেই। সঞ্চয় যা ছিল তাও শেষ। এখন সম্পূর্ণ ধার কর্জের ওপর চলছি। তিন বেলা পেটপুরে খাবার জোটে না।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ খোঁজ নেয়নি। দেয়নি কোন ত্রাণ।

হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, অপ্রতুল ত্রাণ সহায়তার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আর দুর্গম চরাঞ্চলের অবস্থা খুবই খারাপ।

—-ইউএনবি