কুড়িগ্রামে দারিদ্রপীড়িত চরাঞ্চল বেষ্টিত প্রত্যন্ত এলাকার শুধুমাত্র ১৩০ টাকা খরচ করে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরপি) পদে চাকরি পেল ৪৩টি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিনা ঘুষে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আবেগে আপ্লুত তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরের পৌরসভার ভেলাকোপা এলাকার বাসিন্দা অটোচালক নুরনবী ও রেহেনা বেগম দম্পত্যির তিন ছেলের মধ্যে মেজো ছেলে রাশিকুল ইসলামের পুলিশের চাকরির খবরের পরিবারে আনন্দের জোয়ার বইছে। আনন্দে অশ্রুসিক্ত পরিবারের সদস্যরা।
অটোচালক নুরনবী বলেন, ‘আমি এই অটো চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের সাত জনের সংসার চলে। ছেলেদের অনেক কষ্টে মানুষ করছি। আজ রাশিকুলের চাকরির খবর শুনে কান্না ধরে রাখতে পারছি না। সকলের কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই সে যেন দেশ ও বাবা-মায়ের সেবা করতে পারে।’
রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে মেজো ছেলের বিনা টাকায় পুলিশের চাকরি হইছে। আমার স্বপ্ন ইচ্ছে ছিল সন্তানের মধ্যে একজন হলেও যেন পুলিশের চাকরি করতে পারে। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
রাশিকুল ইসলাম বলেন, সত্যি আমি গর্বিত আমার মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। শুধুমাত্র ১৩০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে ভাবতে পারিনি। তারপরেও পরিবার ও বন্ধুদের পরামর্শে লাইনে দাঁড়াই। এভাবে চাকরিটা হবে কল্পনাতেও ছিল না।
রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা ইউনিয়নের পূর্ণিমা রাণী মন্ডল বলেন, ‘নিজ মেধা ও যোগ্যতা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে চাকরির খবরটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো খুব খুশি হতো। বাবার অবর্তমানে মা যে দায়িত্ব নিয়ে বড় করেছেন এই চাকরি হওয়াতে মায়ের সেই কষ্ট স্বার্থক হয়েছে।’
চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর ফেচুকা চরের কৃষক মো. আব্দুল গফুরের সন্তান আবু সায়েম বলেন, ‘শুধুমাত্র ১৩০ টাকায় কোন প্রকার তদবির বা দালাল ছাড়াই পুলিশের চাকরি হবে বিশ্বাসই করতে পারছি না।
সদর উপজেলার মোগলবাসা এলাকার রাজমিস্ত্রী জাহাঙ্গীর মন্ডলের ৪ মেয়ে। টানাটানির সংসার। তার দ্বিতীয় মেয়ে তাসমিন নাহার চাকরি পাওয়ায় আনন্দিত পরিবারের সবাই।
পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, দারিদ্র সীমার নিচে জেলা থেকে নিখুঁত যাচাই-বাছাই করাটা ছিল বেশি চ্যালেঞ্জিংয়ের কাজ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সঠিক ছেলে-মেয়েকে বের করে আনতে পারাটাই আত্মতৃপ্তি। আইজিপি স্যারের নির্দেশে সেই কাজটি করতে পেরে জেলা পুলিশ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৭২০ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৩৪৪ জন উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ-২০০ মিটার, ১৬০০ মিটার, পুশআপ, লংজাম্প, হাইজাম্প, ড্রাগিং, রোপ ক্লাইম্বিং ইভেন্ট শেষে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ৪৩ জন উত্তীর্ণ হন। এদের মধ্যে-পুরুষ-৩৭ জন ও ছয় জন নারী। এর মধ্যে সদরের ১৪ জন, উলিপুরের পাঁচ, নাগেশ্বরী ও রাজারহাটে ছয় জন করে, ফুলবাড়ী ও ভূরুঙ্গামারীতে চার জন করে, রৌমারী ও রাজিবপুরে একজন করে এবং চিলমারী উপজেলায় চার জন চাকরি পেয়েছেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি