নিজস্ব প্রতিবেদক:
পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া সেই তামান্না নূরাকে গত শনিবার যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। এদিন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের মেডিকেল টিমের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ চিকিৎসকরা তামান্নার দুই হাতের এক্সরে, কার্ডিয়াক, হাতের মার্সেল ও পায়ের হিট জয়েন্ট পরীক্ষা করেছে। শারীরিক পরীক্ষায় তার দুটি হাত সংযোজন করা সম্ভব হলেও পরীক্ষায় পায়ে হিট জয়েন্টে ত্রুটি থাকায় পা সংযোজন করা থেকে বেরিয়ে এসেছেন তামান্নার মেডিকেল টিমের চিকিৎসকেরা। তারপরেও তারা তামান্নাকে হেঁটে চলায় সক্ষম করে তুলতে কোনোভাবে সহযোগিতা করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও উন্নত চিকিৎসার কথা চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তামান্নার বাবা রওশন আলী। এদিকে, পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তামান্নার চিকিৎসা বোর্ডের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে তামান্না ও তার বাবা-মা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তামান্নাকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ইনস্টিটিউটে ভর্তি রেখে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকেরা তার কৃত্রিম দুই হাত ও এক পা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রেক্ষিতে গত শনিবার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা তামান্নার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকেরা জানিয়েছে, তামান্নার ডান পাওয়া ভালো থাকলেও বাম পায়ের হিট জয়েন্টে ত্রুটি রয়েছে। তারপরেও তামান্নার দুটো পা যদি লাগানো হয়, সেখানে তামান্নাকে দৃষ্টিনন্দন দেখাবে। কিন্তু সেই পা দিয়ে সে লেখালেখি করতে পারবে না। তাই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামান্নার পা লাগানো হবে না। তবে আশার কথা হলো তামান্নার হাতের মার্সেল ভালো থাকায় কৃত্রিম দুটি হাত সংযোজন করা হবে। ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক বোর্ড আমেরিকার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওখান থেকে তামান্নার দুটি কৃত্রিম হাত এনে সংযোজন করা হবে। সেই হাত দিয়ে তামান্না লিখতে না পারলেও তার অনেক নিজের কাজ সে নিজেই করতে পারবে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিএসসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (নন এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পুরনে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্ন পুরনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেন তিনি। এছাড়া কয়েকদিন পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রী তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি