May 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, September 15th, 2023, 9:31 pm

কেরালার ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ

অনলাইন ডেস্ক :

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ। এ ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর রাজ্যটির সরকার সেটিকে ‘বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট’ ভাইরাস বলে দাবি করেছে। কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিনা জর্জ রাজ্যের বিধানসভায় এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের সংস্থাগুলো এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে বিশেষজ্ঞদের দল এরইমধ্যে কেরালায় পৌঁছেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। অস্থায়ী ল্যাবরেটরি স্থাপন করে এবং বাদুড়দের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা ভাইরাসটির প্রকৃতি ও ধরন নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন তারা। তবে কেরালা সরকার বলছে, সম্প্রতি তাদের রাজ্যে নিপাহ ভাইরাসের যে ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের মিল রয়েছে। এ জন্যই সেটিকে ওই নামে শনাক্ত করা হচ্ছে। কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসের বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের বৈশিষ্ট্য মূলত তিনটি।
প্রথমত, এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে।

দ্বিতীয়ত, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মর্টালিটি রেট, অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি।
তৃতীয়ত, এটি কিন্তু তেমন সংক্রামক নয়। অর্থাৎ সংক্রমণ খুব দ্রুত বেগে ছড়ায় না।

কেরালার থোনাক্কালে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ভাইরোলজি রাজ্যের নিপাহ আক্রান্ত কেসগুলো নিয়ে এরইমধ্যে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। সংস্থার প্রধান ই শ্রীকুমার গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, আক্রান্ত এলাকায় কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ চলছে। তবে বাংলাদেশ থেকে আগত কারও মাধ্যমে কেরালায় ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেটি বলা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ভাইরাসের ধরনটির সঙ্গে বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্টের প্রচুর মিল রয়েছে বলেই সেটিকে ওই নামে শনাক্ত করা হচ্ছে। কেরালায় গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে চতুর্থবার নিপাহ সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো। এটি যেন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য শুরু থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্য সরকার।

সাতটি গ্রাম ঘিরে রেখেছে পুলিশ
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কেরালার কোঝিকোড় জেলার সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেগুলো হলো আতানচেরি, মারুথোনকারা, তিরুভাল্লুর, কুট্টষ্টিয়াডি, কায়াক্কোডি, ভিলিয়াপাল্লি ও কাভিলামপারা গ্রাম পঞ্চায়েত। এলাকাটিকে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করে সেখানকার সব ব্যাংক, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। গত ৩০ অগাস্ট এই এলাকারই এক বাসিন্দা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

প্রথমে ভাবা হয়েছিল ওই ব্যক্তি হয়তো লিভার সিরোসিস-জনিত কোমর্বিডিটিতে মারা গেছেন। কিন্তু দিনকয়েক পরে তার নয় বছর বয়সী ছেলে নিপাহ সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ওই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। বাচ্চা ছেলেটি এখন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে। তাদের পরিবারের আরও একজন সদস্য নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে কমপক্ষে চারটি নিপাহ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে বলে কেরালা সরকার নিশ্চিত করেছে, যার সবগুলোই কোঝিকোড় জেলায়।

এর মধ্যে দুজন ব্যক্তি মারাও গেছেন। কেরালায় কয়েক বছর ধরেই নিপাহ সংক্রমণ ঘুরেফিরে আসার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিন্নারাই বিজয়ন স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, আমি রাজ্যবাসীকে বলবো, আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। সরকার সবধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। নিপাহ সংক্রমণ যেন পাশের রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে না-পড়ে সে জন্য কেরালার প্রতিবেশী কর্ণাটক এবং তামিলনাডুও সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।