November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, September 10th, 2021, 7:02 pm

কোটিপতি ছেলের বাসায় আশ্রয় হলো না মায়ের

ছবি: ইউএনবি

সিলেটে পাঁচটি বাড়ি আর কোটি কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী ছেলের ঘরে ঠাঁই হলো না ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মায়ের। এই বৃদ্ধা মাকে টানা এক বছর এক কক্ষে বন্দী করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কানাইঘাট উপজেলার চাপনগর এলাকার মৃত জোয়াহীদ আলীর স্ত্রী শুকুরা বেগম। বৃদ্ধ এই মায়ের মুখেই নিজের সাথে ঘটা এমন তিক্ত ঘটনাগুলো শুনতে হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি হলে তার খোঁজ পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শুকুরা বেগমের তত্ত্বাবধান করছেন সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ওসমানী হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সদস্য মো. জনি। পরের ছেলে হলেও দেখভাল করছেন নিজের মায়ের মতোই।

গুরুতর আহত শুকুরা বেগম ঠিকমত কথা বলতে পারছেন না। পুলিশ সদস্য জনি জানান, গত বুধবার দুপুরের পর শুকুরা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কানাইঘাট থানার ওসির নির্দেশে তিনি বৃদ্ধা নারীর সব রকম দেখভাল করছেন।

তবে বৃদ্ধা শুকুরা এটুকু বলতে পারছেন, ‘ছেলের বউ বের করে দিয়েছে। বলেছে, যেদিকে ইচ্ছা যাও। তাই আমি মুনাফিকদের ঘরে আর যাবো না। তারা এক ঘরে বন্দী করে রাখে। তাদের কাছে গেলেই ধমক দেয়।’

ছেলে কী করেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আগে বিদেশে আতরের ব্যবসা করতো। এখন দেশে চারটা বিল্ডিং আছে। অনেক টাকা মাসে ভাড়া পায়।’

বৃদ্ধা শুকুরা বেগমের মেয়ের ঘরের নাতনী সানজিদা সুলতানা বলেন, ‘আমার নানীকে নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার ৭৮ নম্বর বাসায় তার ছেলে সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী বন্দী করে রাখেন। এক বছর বন্দী থাকতে থাকতে সুযোগ পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় পাশের ঘরে যাওয়ার অপরাধে রাত ১০ টার দিকে তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন ছেলের বউ।’

সানজিদা জানান, রাতে নগরীর পথে পথে হেটে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করে রাত কাটিয়ে পরদিন মঙ্গলবার সকালে কানাইঘাট উপজেলায় নিজের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন এই বৃদ্ধা মা। পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান এবং বাম পা ভেঙে যায়।

সেখান থেকে খবর পেয়ে শুকুরা বেগমের ভাইয়ের ছেলে তাজুল ইসলাম তাকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি করেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

সানজিদা আরও জানান, ঘটনার খবর পেয়েও তার মামা কিংবা তার পরিবারের কেউ শুকুরা বেগমের কাছে আসেননি। তাই তিনি কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমার নানা মারা যাওয়ার পর নানী বাড়িতে থাকতেন। নানার অনেক সম্পদ। আর তাদের সন্তান বলতে আমার মা আর মামা সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী। এর মাঝে আমার মা মারা গেছেন। বেঁচে আছেন মামা।

অপরদিকে অভিযুক্ত ছেলে সিরাজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা জন্য তার মোবাইলে কল দেয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে তাঁর স্ত্রী রেনু বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যার মা, দায় তার। এখানে কেউ মামলা করে, বা অন্য কিছু করে কোনও লাভ হবে না। আমরাতো দেখতে গিয়েছি। টাকাও দিয়েছি। সকল দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। এখানে অন্য কারো মাথা ব্যথা কেন?’

এবিষয়ে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বুধবার ওই বৃদ্ধার মেয়ের ঘরের একজন নাতনী অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। তাৎক্ষণিক আমি বৃদ্ধার ছেলের সাথে কথা বলেছি। ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। পরে আমি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা জেলা পুলিশের সদস্য জনিকে বলেছি, যেন সে দেখাশোনা করে। অবশ্য আমার ফোন পাওয়ার পর ছেলে একবার গিয়ে দেখে এসেছে শুনেছি।’

তবে ওই বৃদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান ওসি।

—ইউএনবি