অনলাইন ডেস্ক :
লিভারপুলের বিরুদ্ধে শেষ ষোলর দুই লেগ মিলিয়ে ৬-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বুধবার (১৫ মার্চ) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগে করিম বেনজেমার একমাত্র গোলে মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে অ্যানফিল্ডে নাটকীয় প্রথম লেগের ম্যাচের পর মাদ্রিদ তিন গোলের লিডে ছিল। লন্ডনের মাঠে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ৫-২ গোলের জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ঐ ম্যাচের পর লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপ স্বীকার করেছিলেন তার দলে ফিরে আসার সুযোগ এক শতাংশ থাকতে পরে। সান্তিয়াগোতে গত বুধবার পুরো সময়ে কখনই লিভারপুলকে ম্যাচে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে বার্সেলোনা কিংবা ২০০৫ সালে এসি মিলানের বিরুদ্ধে যেভাবে লিভারপুল ফিরে এসেছিল তার ছিটেফোটাও এই ম্যাচে ছিলনা। এনিয়ে টানা তৃতীয় মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্ব থেকে লিভারপুলকে বিদায় করলো মাদ্রিদ। এর মধ্যে গত বছরের ফাইনাল ম্যাচটি রয়েছে। ম্যাচ শেষে বেনজেমা বলেন, ‘ম্যাচটি কঠিন ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই আমরা এগিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করেছি যা আমাদের পারফরমেন্সে স্পষ্ট ছিল। এখন আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে। যে ধরনের ফুটবল হয়েছে তাতে সবাই অস্বস্তিতে ছিল। প্রত্যেকেই এর থেকে বেশি কিছু আশা করেছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে ঘরের মাঠেও নিজেদের স্বাভাবিক খেলা উপহার দেয়া যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জয় নিয়ে আমরা মাঠ ছাড়তে পেরেছি।’ রেকর্ড ১৪ বারের বিজয়ী মাদ্রিদ এই ম্যাচে লিভারপুলকে পরাজিত করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। দুই ডিফেন্ডার এডার মিলিটাও ও এন্টোনিও রুডিগারের সঙ্গে সফরকারীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদ তাদের ব্যবধান বাড়ানোর বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু লিভারপুলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারের দক্ষতায় তা হতে পারেনি। এ ছাড়া মাদ্রিদের স্ট্রাইকাররাও বেশ কিছু ভুল করেছে। প্রথম লেগে মাদ্রিদের হয়ে জোড়া গোল করেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও বেনজেমা। কিন্তু এই ম্যাচে এই দুজনের কেউই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যদিও ৭৮ মিনিটে মাদ্রিদের জয়সূচক গোলের পিছনে এই দুজনের সম্মিলিত অবদান ছিল। ভিনিসিয়াসের পাসে বেনজেমা সহজেই গোল করে মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন। ম্যাচে মাদ্রিদের জন্য একমাত্র দুঃসংবাদ ছিল বেনজেমার ইনজুরি। ইনজুরির কারণে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করায় কোচ কার্লো আনচেলত্তি ৮২ মিনিটে অধিনায়ককে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন। ইনজুরি আক্রান্ত মৌসুমে আবারো কোন গুরুতর ইনজুরিতে তিনি পড়েছেন কিনা তা নিয়ে অবশ্য ক্লাবের পক্ষ থেকে কোন ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়নি। আনচেলত্তি নিশ্চিত করেছেন রোববার মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোর আগেই বেনজেমা দলে ফিরছেন। লিভারপুল বস ক্লপ বলেন, ‘পুরো ম্যাচেই মাদ্রিদের আধিপত্য ছিল। অ্যালিসন দুটি দুর্দান্ত সেভ করে আমাদের রক্ষা করেছিলেন। মাদ্রিদ একটি অসাধারণ দল, আর সে কারণেই পরবর্তী রাউন্ডে ভাল দলটিই উন্নীত হয়েছে।’ এবারের আসরে লিভারপুলের প্রথম থেকে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। প্রিমিয়ার লিগে আগের সপ্তাহে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর এই ম্যাচে সেই একই ধরনের যাদু তারা মাঠে দেখাতে পারেনি। আক্রমণভাগে মূল দলে মোহাম্মদ সালাহ, ডারউইন নুনেজ ও কোডি গাকপোর সঙ্গে ক্লপ দিয়োগো জোতাকেও নামিয়েছিলেন। প্রথম লেগে ৫-২ ব্যবধানে হারার পর ম্যাচে ফিরে আসার লক্ষ্য নিয়েই এই ম্যাচে খেলতে নেমেছিল অল রেডরা। প্রথম সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি লিভারপুল। সালাহর অ্যাসিস্টে নুনেজের নেয়া শটটি সহজেই রুখে দেন কোর্তোয়া। অন্যদিকে পোস্টের খুব কাছে থেকে ভিনিসিয়াসের শট দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন অ্যালিসন। এডুয়ার্ডো কামভিনগার দুরপাল্লার শট গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। এরপর ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন একে একে ভিনিসিয়াস, ফেডে ভালভার্দে ও বেনজেমাকে হতাশ করেন। এই সময়ের মধ্যে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নিয়েছে মাদ্রিদ। মধ্যমাঠে কামভিনগা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বেনজেমার জয়সূচক গোলের যোগানদাতাও তিনি ছিলেন। লিভারপুলের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেনজেমা এনিয়ে সপ্তম গোল করলেন, যা অন্য যেকোন খেলোয়াড়ের তুলনায় বেশি। গত ১০ মৌসুমে ষষ্ঠবারের মত শিরোপা ঘরে তোলার পিছনে বেনজেমাই মাদ্রিদের মূল ভরসা। যদি সে ফিট থাকে তবে নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকই পালন করবেন। আনচেলত্তি বলেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। গত মৌসুম থেকেই আমরা এই আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি। শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে উভয় লেগেই আমরা ভাল খেলেছি।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা