একসময় অপরিচিত বিদেশি সবজি হিসেবে বিবেচিত ক্যাপসিকাম বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে মিষ্টি মরিচ নামে পরিচিত ক্যাপসিকামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের চাষিরা এই সবজির চাষের দিকে ঝুঁকছেন। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ৪২ বছর বয়সী কৃষক মঞ্জুরুল আলম। তিনি কৃষি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করে সফল হয়েছেন।
আবহাওয়ার অনুকূলে থাকায় তার খেতে ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া তার সাফল্য এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় তার মতো আরও কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষে এগিয়ে আসছেন।
কৃষক মঞ্জুরুল আলম বলেন, তিনি মূলত একজন ফুল চাষি। দেশে করোনা আসার পর কয়েক বছর ফুলের বাজারে ধস নামায় অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপসিকাম চাষের। তবে এক্ষেত্রে প্রথমে তাকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির (সেচ)পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়।
তিনি জানান, বিএডিসির পক্ষ থেকে তার এক বিঘা জমিতে আধুনিক পলি শেড করে দেয়া হয়। ওই শেডে বৃষ্টির পানি রিফ্রেশ করে খেতে প্রয়োগের পাশাপাশি তাপ নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ফ্যান, ফগার ইরিগেশন পদ্ধতিসহ নানা কলাকৌশল সংযোজন করা হয়। এরপর ওই শেডে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়। প্রথম বছরেই তিনি ক্যাপসিকাম চাষ করে সাফল্য অর্জন করেন।
মঞ্জুরুল আলম জানান, প্রথম দিকে খেত থেকে প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ২০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতেন। এরপর বাজারে ক্যাপসিকামের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ বছর তার খেতে লাল, সবুজ, হলুদ রঙের ক্যাপসিকামের চাষ হয়েছে। কিছু কিছু ফলে কালার আসছে। সামনে কয়েকদিনের মধ্যেই পুরো খেত বাহারি রঙের ক্যাপসিকামে সৌন্দর্য ছড়াবে।
মঞ্জুরুল বলেন, ক্যাপসিকাম যশোর শহর ছাড়াও রাজধানীর বাজারে পাঠানো হয়। পরে তা বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ক্রয় করে। বিশেষ করে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে এর ব্যবহার বেশি।
বাজারে প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে কৃষক মঞ্জুরুল আলমের এ সফলতা দেখে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকেও চাষিরা আসছেন তার কাছ থেকে ক্যাপসিকামের চারা কিনতে। জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও সীমিত পরিসরে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়েছে।
জেলার ঝিকরগাছা, মনিরামপুর, চৌগাছাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ জানান, মঞ্জুরুলকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৃষি কর্মকর্তা ও বিএডিসি কর্মকর্তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের মাটিতে যে ক্যাপসিকাম চাষ হয় তা প্রমাণ হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও সীমিত পরিসরে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়েছে। আগামীতে এর পরিধি আরও বাড়বে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপঙ্কর দাস বলেন, ক্যাপসিকাম একটি লাভজনক চাষ এবং আমরা এই ধরনের লাভজনক সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি।
যে সব কৃষক ক্যাপসিকাম চাষে এগিয়ে আসবে তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি