নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিগত ১৩ বছর বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৮১ টন এবং সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ বাড়লেও বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের আহরণের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি মৎস্য আহরণের পর আগামী বছরের জন্য কী পরিমাণ মাছ সমুদ্রে রেখে দেয়া হচ্ছে সে বিষয়েও গবেষণা প্রয়োজন। সেজন্যই চাহিদা থাকলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমুদ্রগামী জাহাজ কিংবা ট্রলারকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। সমুদ্রে মাছের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতে ওভার ফিশিং বা অতিরিক্ত মাছ শিকার বন্ধ করতে হবে। বিদেশী জাহাজ যাতে দেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ তারা প্রয়োজনীয় জাতের মাছ রেখে অপ্রয়োজনীয় মাছ শিকার করে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে যায়। তাতে মাছের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সেজন্য সরকারকে গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। আগের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৪ টন আহরণ করা হয়। তাছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯১১ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৬, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫২৮, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৫, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৮১ টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, সমুদ্রে মৎস্য আহরণে বর্তমানে ২৩১টি নিবন্ধিত বাণিজ্যিক ট্রলার রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২২০টি ফিশিংয়ে নিয়োজিত আছে। বাণিজ্যিক নৌযানের মধ্যে রয়েছে চিংড়ি ট্রলার, ট্রায়াল ট্রিপ বটম, বটম ট্রলার, মিডওয়াটার ট্রলার এবং মিডওয়াটার রূপান্তরিত ট্রলার। ৬৭ হাজার ৫৬৯টির সামুদ্রিক নৌযানের অনুমোদন রয়েছে। তাার মধ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌযান ৩২ হাজার ৭৫৯ এবং ইঞ্জিনবিহীন নৌযান ৩৪ হাজার ৮১০টি। গত অর্থবছরে আহরণ করা শীর্ষ ১০টি মাছ হলো সার্ডিন, ম্যাকারেল, ইলিশ, ছুরি, পোয়া, রূপবান, লইট্টা, চিংড়ি, কাঁটামাছ ও রূপচাঁদা।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় যুক্ত হয়েছে নতুনভাবে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা। তারপর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকে অগ্রাধিকারমূলক খাত চিহ্নিত করে সরকার বছরে দুবার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এদিকে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগর থেকে কী পরিমাণ মাছ প্রতি বছর তুলে নেয়া হচ্ছে এবং আগামী বছর কী অবস্থায় আহরণ সম্ভব হবে তার পরিসংখ্যানগত গবেষণা জরুরি। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। তাছাড়া অন্যান্য দেশে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে মৎস আহরণ করে, সেখানে এদেশের প্রযুক্তি পুরনো। সরকারের নীল অর্থনীতি ব্যবহার নিয়ে যে পরিকল্পনা আছে সেখানে যোগ্য লোকের সঙ্কট আছে। নীল অর্থনীতির সক্ষমতা থাকলেও সেগুলো ব্যবহারে এখনো সঠিক পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। সমুদ্রে ৪০ থেকে ১০০ মিটার এলাকায় কোন কোন ট্রলার বা জাহাজ মাছ ধরবে তা নির্ধারিত থাকলেও ওই নিয়ম মানা হচ্ছে না। সেজন্য জাহাজ মালিকদের নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। সীমানা পরিবর্তনের কারণে বড় ট্রলার বা জাহাজগুলো নৌকার এলাকার মধ্যে ঢুকে গেলে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়। ওসব কারণে সমুদ্রে জাহাজ চলাচলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মো. শরীফ উদ্দিন জানান, সমাপ্ত অর্থবছরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৭ লাখ ৩৪ হাজার টনের বেশি মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। এত পরিমাণ মাছ আগে কখনো আহরণ করা হয়নি। সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করার কারণে প্রতি বছর সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ বাড়ছে। বছরে ৬৫ ও ২২ দিনের দুটি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে সমুদ্রে মা মাছের প্রজনন বাড়ছে। ওই সময়ে সমুদ্রে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র