অনলাইন ডেস্ক :
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে একটি ইতিহাসের মঞ্চায়ন দেখা গেল। ক্রিকেট স্বাক্ষী হলো প্রথম লাল কার্ডের। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) ম্যাচে প্রথম দল হিসেবে লাল কার্ড দেখানো হলো ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সকে। শেষ ওভারে দলটি মাঠ থেকে উঠিয়ে নিল সুনিল নারাইনকে। ফিল্ডিং ইনিংস শেষ করতে হলো তাদেরকে ১০ জন নিয়ে। প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০৫ সালে গ্লেন ম্যাকগ্রা মজা করে আন্ডার আর্ম বল করার পর এই অস্ট্রেলিয়ান পেসারকে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন আম্পায়ার বিলি বাউডেন। সেসব ছিল কৌতূক করে। কিন্তু সত্যিকারের শাস্তি হিসেবে কারও মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনা ক্রিকেটে এটিই প্রথম। মন্থর ওভার রেটের জন্য কড়া এই শাস্তির নিয়ম করা হয় টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই।
তবে মাঠে এই শাস্তি পাওয়ার পর ম্যাচ শেষে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ত্রিনবাগো অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। সিপিএলে রোববার ম্যাচটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে জিতে নেয় শাস্তি পাওয়া ত্রিনবাগোই। কয়েক বছর ধরে মন্থর ওভার রেটের প্রবণতা প্রবলভাবে বেড়ে যাওয়ায় এবার বেশ কিছু কড়া নিয়ম করে সিপিএল কর্তৃপক্ষ। লাল কার্ড এটিরই অংশ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি ইনিংসের জন্য বরাদ্দ ৮৫ মিনিট। সিপিএলে এবার নিয়ম করা হয়, ইনিংসের ১৭তম ওভার শেষ করতে হবে ৭২ মিনিটের মধ্যে, ১৮তম ওভার শেষ করতে হবে ৭৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এবং ১৯তম ওভার শেষ করতে হবে ৮০ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে। শেষের এই ওভারগুলো সময়মতো শুরু করতে না পারার বিভিন্ন শাস্তি রাখা হয়। ১৮তম ওভারের শুরুতে যদি দেখা যায় সময় বেশি লেগে গেছে, তাহলে একজন বাড়তি ফিল্ডার ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে রাখতে হবে।
১৯তম ওভারের শুরুতেও যদি সময় বেশি লাগে, তাহলে দুজন বাড়তি ফিল্ডার (মোট ৬ জন) রাখতে হবে বৃত্তের ভেতরে। শেষ ওভার শুরুর সময়ও যদি সময়ে পিছিয়ে থাকে ওই দল, তাহলে একজন ফিল্ডারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে। বৃত্তের ভেতরে তো ৬ জন থাকবেনই (বোলার-কিপারসহ ৮ জন)। সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের বিপক্ষে রোববারের এই ম্যাচে এই সবগুলি শাস্তিই পেতে হয় ত্রিনবাগোকে। অষ্টাদশ ওভারে একজন বাড়তি ফিল্ডার ভেতরে আনতে হয় তাদের। নারাইনের করা ওভারটি থেকে রান আসে ১২। ১৯তম ওভারে আরও একজন ফিল্ডার বৃত্তের ভেতরে আনতে বাধ্য হয় তারা। পেসার আলি খানের করা ওভারটি থেকে রান আসে ৮।
এরপর শেষ ওভারের ওই লাল কার্ড। একজনকে তুলে নিতে বাধ্য ত্রিনবাগো। তারা বাইরে পাঠিয়ে দেয় নারাইনকে। ততক্ষণে তার চার ওভারের বোলিং শেষ (৪-০-২৪-৩)। ফিল্ডিং তার বরাবরই দুর্বলতার জায়গা। আম্পায়ার যখন কার্ড বের করছেন, ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান বিশপ বলেন, ‘এটা হতে পারে ঐতিহাসিক মুহূর্তৃ ওহ, লাল কার্ড… এই রঙের কার্ড কেউ দেখতে চায় না।” বৃত্তের বাইরে স্রেফ ২ জন ফিল্ডার নিয়ে শেষ ওভার বোলিং করেন অভিজ্ঞ ডোয়াইন ব্রাভো। সেই ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান নেন শেরফেন রাদারফোর্ড। ওপেনিংয়ে আন্দ্রে ফ্লেচারের ১৭ বলে ৩২ ও পরে রাদারফোর্ডের ৩২ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ২০ ওভারে ১৭৮ রান করে সেন্ট কিটস। রান তাড়ায় দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও চাডউইক ওয়ালটনকে দ্রুত হারায় ত্রিনবাগো। তবে তিনে নেমে নিকোলাস পুরান খেলেন ৩২ বলে ৬১ রানের ইনিংস।
পরে পোলার্ড ৫ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ৩৭ রান করে, আন্দ্রে রাসেল দুটি করে চার ও ছক্কায় করেন ৮ বলে অপরাজিত ২৩। ম্যাচ জিতে যায় তারা ১৭ বল বাকি রেখেই। ম্যাচ জিতলেও পোলার্ড মেনে নিতে পারছিলেন না লাল কার্ডের ব্যাপারটি। ম্যাচ শেষে রাখঢাক না রেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। “সত্যি বলতে, সবার কঠোর পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে দেবে এটা। আমরা তো পুতুল এবং যা বলা হবে, সেটা করতে আমরা বাধ্য। চেষ্টা করব মাঠে যত দ্রুত সম্ভব খেলতে। কিন্তু এই ধরনের টুর্নামেন্টে যদি ৩০-৪৫ সেকেন্ডের জন্য এত বড় শাস্তি দেওয়া হয়, এটা সত্যিকার অর্থেই হাস্যকর।”
আরও পড়ুন
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু
নেপালে ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধসে মৃত্যু বেড়ে ১৯২