টিকে থাকার লড়াইয়ে ফের খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ নির্মাণে নেমেছেন স্থানীয় প্রায় দুই হাজার মানুষ। কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। এর আগে একই স্থানে ১৮ জুলাই (সোমবার) দুই হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ফের বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছায় এই কাজে অংশগ্রহণ করেছেন উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, গত ১৭ জুলাই (রবিবার) ভোর রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪/১ প্লোডারের দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা খালের গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ভাটার টানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরদিন ১৮ জুলাই (সোমবার) স্বেচ্ছাশ্রমে দুই হাজার মানুষ রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলে ওই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ না করায় গত রবিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে পুনরায় রিংবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি বিস্তীর্ণ জনপদে ডুকে পড়ে।
তারা জানান, নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অনেক পরিবার। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। অনেকেই আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
বাঁধ নির্মাণে যোগ দেয়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঁশ ও ব্যাগ স্বল্পতায় কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সরঞ্জামাদি দিয়েছিল সেটা যথেষ্ট ছিল না। যথেষ্ট মানুষ থাকার পরেও বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারিনি।
দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের আক্তারুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের কারণে আমার ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঁধ না হলে ছেলে মেয়ে নিয়ে কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। সে কারণে বাঁধার কাজে নেমে পড়েছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মাসুদ রানা বলেন, পানিতে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১০ গ্রাম তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে তিন হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের এবং ডুবে গেছে আমনের বীজতলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ। ক্রমাগত ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এই ইউপি সদস্য।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, একই স্থানে বারবার ভাঙা দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ভোগান্তি।
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ওই এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দ্রুত স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জনমনে স্বস্তি নেই। কারণ বিগত ১০ বছরে জরুরি কাজের নামে কয়রার বেড়ি বাঁধ সংষ্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১৪২ কোটি ৫৮ লাখ আট হাজার টাকারও বেশি। অথচ সেইসব জোড়াতালিতেও লুটপাট বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে আমলা, কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার মিলিয়ে সরকারি তথা জনগণের অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র।
এই নাগরিক নেতা বলেন, টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে আরেক জনের কাছে কাজটা বিক্রি করে দেন। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য, এতদিন এটাই দেখে এসেছি। তাই এবার আর এমনটি চাই না।
তিনি বলেন, কয়রায় নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তাঘাটে কিংবা পরের জমিতে আশ্রয় নেন। অনেকে আবার সর্বস্ব হারিয়ে ভাসমান কচুরিপানার মতো শহর ও বন্দরে পাড়ি দেন। যাদের প্রকৃত হিসাব সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। শুধু দক্ষিণ বেদকাশী নয়, উপকূলীয় এ উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষকে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এতোদিন কয়রার মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। এখন বরাদ্দ হয়েছে, এবার আন্দোলন সচ্ছতার সঙ্গে কাজটি বাস্তবায়নের বিষয়টি বুঝে নেয়ার।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ণের বোর্ডের (বিভাগ-২) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. মশিউল আবেদিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ মেরামতের মাধ্যমে পানি আটকানোর জন্য মানুষ কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে। পানি আটকানোর পর মূল ক্লোজারে কাজ করা হবে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি