November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 3rd, 2021, 8:48 pm

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসছে। সেজন্যই প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। সব মিলিয়ে ওই ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৭ হাজার ৯২০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার গত জুনে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছিল। সেগুলোর মধ্যে মহেশখালীতে প্রতিটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২টি কেন্দ্র ছিল। মহেশখালী দ্বীপে সব মিলিয়ে সরকারের ৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখনো নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় সবগুলোই বাতিল করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ওই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট। তবে বাতিল হওয়া কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কয়েকটি এলএনজি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে রূপান্তরিত হবে। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন পাওয়ার পরও কোম্পানিগুলো নির্মাণ কাজ শুরু না করায় এবং পরিবেশগত ঝুঁকি কমানোর অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, কয়লাভিত্তিক ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার একটি এলএনজিভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পিডিবি এখন পর্যন্ত মহেশখালী দ্বীপে ৫ হাজার ৫১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে। আরো ৯৬ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাতিল হতে যাওয়া ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ প্রকল্প। প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ২টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র বে অব বেঙ্গল পাওয়ার কোম্পানির নির্মাণের কথা ছিল। চায়না হুয়াদিয়ান হংকং কোম্পানি এবং পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ওই কোম্পানি গঠিত হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। তাছাড়াও রয়েছে মালয়েশিয়ার টেনেগা ন্যাশনাল বারহাদ ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দক্ষিণ কোরিয়ার কেপকো ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চীনের সেপকো ও পিডিবির যৌথ উদ্যোগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। টেনেগা ন্যাশনাল বারহাদ, কেপকো এবং সেপকোর সঙ্গে পিডিবির সমঝোতা স্মারক সই হলেও তা আর এগোয়নি। এখন সরকার ওই কেন্দ্রগুলো নির্মাণ থেকে সরে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে মহেশখালীতে পিডিবির পরিকল্পনাধীন অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে গত জুনে বাতিল হওয়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ৫২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের পরিবর্তে মহেশখালীতে ৭২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পিডিবি মতামত দিয়েছে। বেসরকারি কোম্পানি ওরিয়ন পাওয়ার ঢাকা লিমিটেডের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি এই মত দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্তের পর পিডিবি মহেশখালীতে ওরিয়নকে ৩০ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দিতে পারে। গত জুনে বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো হলো- পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাওয়া ৫২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম ২৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনা ৫৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (২), বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাতিল করা হলেও দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হবে না। কয়লার প্রকল্পগুলো গ্যাস, এলএনজি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। তাছাড়া এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।