জেলা প্রতিনিধি:
বাগেরহাটে খননকৃত মাটি ও বালু রাখার জায়গা না থাকায় বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ ক্যানেলের খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে পর্যাপ্ত জমি না থাকায় খননকৃত মাটি ফেলতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ডাইক (বালু রাখার জন্য চারপাশ ঘেরা বাঁধ) ভেঙে খননকৃত মাটি আবারও নদীতে পড়ছে। এর সঙ্গে নদীতে অতিরিক্ত ¯্রােত ও যান চলাচলের কারণেও ড্রেজিং বন্ধ রাখতে হয় দিনের বেশিরভাগ সময়। খননকৃত বালুমাটি রাখার জন্য নতুন জমির ব্যবস্থা না হলে যেকোন সময় খনন কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। ফলে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই নৌ রুটটির নাব্যতা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর দুই পাশে রাখা খননকৃত বালুমাটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহন করে খনন কাজে গতি ফেরানোর দাবি স্থানীয়দের। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ ক্যানেলটি নাব্যতা সংকটে ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প চ্যানেল হিসেবে সুন্দরবনের শ্যালা নদী থেকে নৌযান চলাচল শুরু হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২০১৪ সালের ০৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডোবায়। তখন আবারও মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলকে নতুনভাবে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেল ড্রেজিং শুরু হয়। খনন শেষে ২০১৫ সালের শেষ দিকে আবারও এই চ্যানেল থেকে নৌযান চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে চ্যানেলকে সচল রাখতে নিয়মিত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ ড্রেজিং চলে আসছে। এখন পর্যন্ত এই চ্যানেল থেকে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ঘনমিটার (এক ঘন মিটার সমান ৩৫ দশমিক ৩১ ঘনফুট) বালুমাটি খনন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চ্যানেল খননের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাটার সময় ১৬ ফুট গভীরতা রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড চারটি ড্রেজার প্রতিদিন এই চ্যানেলে খনন কাজ করছে। কিন্তু নদীতে ভাটার সময় অতিরিক্ত ¯্রােত, নৌযান চলাচল ও মাটি রাখার জায়গার অভাবে খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত ¯্রােত উপেক্ষা ও নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রেখে ড্রেজিং করা সম্ভব হলেও বালুমাটি রাখার জমির অভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে খনন কাজ। মোংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেলের বুড়িরডাঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, খননকৃত মাটি ফেলার কারণে ক্যানেলের দুই পাশে মাটির উঁচু স্তুপ তৈরি হয়েছে। মাঝে মাঝে এই স্তুপের ডাইক ভেঙে খননকৃত বালু নদীর মধ্যে চলে আসে। ঝড় বৃষ্টিতেও বালু যায় নদীর মধ্যে। এ ছাড়া বালুর স্তুপের ফলে স্থানীয় বসবাসকারীদের নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিতে বালু ঢুকে স্থানীয় অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, অনেকের ঘরবাড়িতেও ঢোকে বালু। জনবসতিপূর্ণ এলাকা বাদ রেখে জমি অধিগ্রহণ করে খননকৃত মাটি ফেলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বুড়িরডাঙ্গা গ্রামের তানিয়া বেগম বলেন, নদী খননের স্তুপ করা বালুতে আমাদের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে থাকতে খুব কষ্ট হয়। কোনো সাহায্যও পাই না আমরা। পাকখালি এলাকার জামাল মৃধা বলেন, সারা বছরই নদী খনন চলে। খননকৃত মাটি অনেক বড় ডাইকে রাখে। কিন্তু ডাইকের বাঁধগুলো খুবই ভঙ্গুর হওয়ায় মাঝে মাঝেই নদীতে চলে যায় ডাইকের বালু। এর থেকে নদীর দুই পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা অধিগ্রহন করে বালু রাখলে আর এই ঝামেলায় পড়তে হত না। ড্রেজিং কাজও নির্বিঘেœ চলবে। ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার গোপীনাথ দাস বলেন, প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ড্রেজার চালানোর সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু ¯্রােত বেশি থাকায় এবং প্রতিনিয়ত বড় ধরনের নৌযান চলাচলের কারণে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি ড্রেজিং সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিআইডব্লিউটিএ, ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর), মো. আনিছুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত সিলটেশনের কারণে প্রতিনিয়ত চ্যানেল ভরাট হচ্ছে। ৫-৬ বছর ধরে করা ড্রেজিংয়ের বালুতে নদীর দুইপাশ ভরে গেছে। আশপাশে আর কোনো খালি জায়গা নেই। এ ছাড়া রাস্তাঘাট না থাকায়, খননকৃত মাটি অন্যত্র নেওয়া যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে দুই-তিনটা ডাইকের মাটি সরিয়েছি। এতে সাময়িক ভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাচ্ছে। মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এম এ সবুর রানা বলেন, মোংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেলটি সুন্দরবন ও আশপাশ এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন মূল্যে এই চ্যানেলের খননকাজ চালু রাখা প্রয়োজন। খনন বন্ধ হয়ে গেলে এই চ্যানেলও বন্ধ হয়ে যাবে। চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলে এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ ও মানুষের জীবন জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য যেকোন মূল্যে জমি অধিগ্রহন করে খনন কাজ অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি। বিআইডব্লিউটিএ-র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন বলেন, দীর্ঘদিন খননকৃত মাটি ফেলার ফলে ক্যানেলের দুইপাশের খাসজমি বেশিরভাগ ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যে খাস জমি রয়েছে তাও কিছুদিনের মধ্যে ভরে যাবে। তখন ড্রেজিং কাজ চালু রাখার জন্য জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এজন্য আমাদের বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সারাবছরই ড্রেজিং কাজ চালিয়ে রাখা যায়।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি