April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 6th, 2022, 9:35 pm

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত চাল ও গম আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত চাল ও গম আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে। ওই লক্ষ্যে বাজেটে রাখা বরাদ্দের অতিরিক্তি ৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। মূলত ডলারের বিনিময় হার, আমদানি শুল্ক ও ভাড়া বৃদ্ধির কারণে খাদ্য আমদানিতে সরকারের খরচ বাড়বে। চাল আমদানিতে সরকারের ব্যয় বাড়বে ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা আর গম আমদানিতে ৭৭০ কোটি টাকা। যদিও দেশে চাল ও গমের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ৪ লাখ টন বেশি হয়েছে। তারপরও সরকারকে এ বছর ৯ লাখ ৩০ হাজার টন চাল এবং সাড়ে ৬ লাখ টন গম আমদানি করতে হচ্ছে। তার মধ্যে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল এবং সাড়ে ৬ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আর বাকি চার লাখ টন চাল চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহ না হওয়ায় গম আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে গম আমদানির জন্য সরকারকে বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। বাজেট তৈরির সময় চাল ও গম আমদানিতে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ধরা হয়েছিল। বর্তমানে ডলারের দাম ১০৭ টাকা। আবার চাল ও গম দুটিই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে সরকারের আমদানি খরচ বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ টন চাল আমদানির সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করেছে। তাতে শুল্ক ছাড়া অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানিতে শুল্ক দেয়া লাগতো না। কিন্তু চলতি অর্থবছরে চালের ক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ শতাংশ এবং ডিসেম্বরের পর ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। তাতে চাল আমদানি বাবদ সরকারকে ৭৭০ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। তবে গমের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক লাগবে না। সাধারণত দেশে যখন উৎপাদন বেশি থাকে তখন শুল্ক বাড়িয়ে আমদানি কমানো হয়। আবার যখন উৎপাদন কম হয় তখন শুল্ক কমিয়ে আমদানি বাড়ানো হয়।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে থাইল্যান্ড থেকে ২ লাখ টন, ভিয়েতনাম থেকে ৩০ হাজার টন, মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন এবং ভারত থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ভারত থেকে এক লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে ৫০ হাজার টন, বুলগেরিয়া থেকে এক লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আর রাশিয়ার সঙ্গে জিটুজির মাধ্যমে ৫ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছে সরকার। তাছাড়া সরকার চলতি অর্থবছরে দেড় লাখ টন গম অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ না হওয়ায় এখন চাহিদার পুরোটাই আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৭৭০ কোটি টাকা। আর বেসরকারিভাবে ১৪ লাখ ৯২ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৮ লাখ ৯১ হাজার ২১০ টন চালের এলসি খোলা হয়েছে। তবে আমদানি করা হয়েছে মাত্র এক লাখ ৮০ হাজার ৪৭০ টন। আর গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত গম আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ১২ হাজার টন। যদিও গত অর্থবছরের ওই সময়ে ৯ লাখ ৪৭ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছিল।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারিভাবে যদি রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করা না যায় তাহলে আর্জেন্টিনা ও কানাডা থেকে আনা হতে পারে। আর যদি বেসরকারি খাতে গম না আসে তাহলে চালের ওপর চাপ বাড়বে। প্রতি বছরই খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে ধান-চালের দাম নির্ধারণের পাশাপাশি গমের দামও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অতিসম্প্রতি ধান-চালের দাম নির্ধারণ করা হলেও গমের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। তাতে বাজারে গমের দাম নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া সরকার গম সংগ্রহ বন্ধ করার ফলে কৃষক উৎপাদনে নিরুৎসাহ হতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল-গম উৎপন্ন হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপন্ন হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টন। তারপরও আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদ আছে ১৫ লাখ ৬৪ হাজার টন। তার মধ্যে চাল আছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টন এবং গম এক লাখ ৯৮ হাজার টন।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, গম ও সারের দাম যে হারে বেড়েছে সামনে তা আরো বাড়তে পারে। ফলে বাংলাদেশ সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে বিকল্প বাজারের দিকে যেতে হবে। সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। সার ও গমের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো বিকল্প বাজার থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে। যদিও ধান-চাল সংগ্রহ এবং সার বিতরণে সরকার বিপুল অঙ্কের টাকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারেরও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে।
অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার আগাম সতর্কতা হিসেবে আমরা চাল আমদানি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। তার মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টনের চুক্তি করা হয়েছে।