November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 27th, 2022, 9:18 pm

খাদ্য মজুদ নিশ্চিতে শুল্ক কমানো হলেও কাঙ্খিত পরিমাণ চাল আমদানি হয়নি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে খাদ্য মজুদ নিশ্চিতে আমদানি শুল্ক কমানো হলেও কাঙ্খিত পরিমাণ চাল আমদানি হয়নি। সরকার চলতি বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। আর আমদানিতে শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৭ লাখ টন চালের ঋণপত্র খুললেও আমদানির সাহস পাচ্ছে না। ফলে দেশে চালের মজুদ নিশ্চিত না হলে আগামীতে খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা রয়েছে। কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ৪৭ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। আউশ মৌসুমে ১১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ২৭ লাখ টন এবং আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৮ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৭ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়লেও চলতি বছরের জুনে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে আউশ মৌসুমের আবাদ কমে যায়। ফলে এ বছর ৯ লাখ হেক্টর জমিতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ওই হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছর আউশ উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন কমছে। আর আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৩৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার দেশে পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে চলতি বছরের জুনে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়। এ সময় আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে আসা হয়। তবুও আমদানির পরিমাণ সন্তোষজনক না হওয়ায় আগস্টে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালের শুল্ক আরো কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। দেশের বাজারে চালের মূল্য কমাতে সরকার চলতি বছর প্রায় ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য ৩২৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। তবে কয়েক দফায় শুল্ক কমানোর পর ঋণপত্র খুললেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চাল আমদানি করছে না। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ১ জুলাই থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে বেসরকারিভাবে মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭০ টন চাল আমদানি হয়েছে। আর সরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে সাড়ে ২৩ হাজার টন।
সূত্র আরো জানায়, দেশে চাহিদা অনুপাতে মজুদ না থাকলেও আমদানির অনুমতি নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর চাল আমদানির পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। যদিও একসময় চাল আমদানির জন্য কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল না। তবে গত কয়েক বছর সরকার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ওই অনুযায়ী অনুমোদন দিচ্ছে। যা চাল আমদানির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তাছাড়া ঋণপত্র খোলার পর যে দামে চাল দেশে প্রবেশ করছে তার বিপরীতে ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। মূলত ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে ব্যবসায়ীদের এ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হার ও ডলার সঙ্কটের কারণে অনেক ব্যাংক চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতেও অনীহা দেখাচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলার পরও অনুমোদন পাওয়ার দীর্ঘসূত্রতায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বর্তমানে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই অনুমোদন পেলেও চাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। কারণ অনেক ব্যবসায়ীই চলতি বছরের মাঝামাঝিতে দেয়া সরকারি অনুমতিপত্রের বিপরীতে চাল আমদানি করে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে চাল আমদানিকারকদের মতে, ব্যাংকগুলোয় ঋণপত্র খুলতে অনীহা, ঋণপত্র অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা ছাড়াও প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে চাল আমদানির ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশ। আমদানিকৃত চাল দেশে প্রবেশের মুহূর্তে যদি কোনো মৌসুমের ধান উত্তোলন মৌসুম শুরু হয় তখন আমদানি ব্যয়ের সঙ্গে দেশীয় চালের প্রতিযোগিতায় ব্যবসায়ীদের লোকসানের ঝুঁকি থাকে। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে চালের আমদানিতে অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। আর বেসরকারিভাবে চালের আমদানিতে দুই দফায় প্রায় ৪৭ শতাংশ শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। ডলারের দাম বাড়লেও শুল্ক মওকুফে ব্যবসায়ীদের বেশি হারে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাল ব্যবসায়ীরা কথায় কথায় অজুহাত দিয়ে এর আগেও বাজারে দাম বাড়িয়েছে। এখনো তারা ওই একই প্রক্রিয়ায় অজুহাত দেখিয়ে সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছে। যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তারা মোটা টাকা আয় করতে পারে। সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সরকারি ঋণপত্রগুলো (এলসি) করা হয়। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আমদানি করতে খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক এলসি সোনালী ব্যাংকে খোলা হয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকও এ-সংক্রান্ত এলসি খুলছে। খাদ্য অধিদপ্তর বৈশ্বিক বাজারমূল্য এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পর্যালোচনা করেই খাদ্য আমদানি করছে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি নিয়ে যেসব যুক্তি দিচ্ছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। ইতোমধ্যে ডলারের মূল্যও সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, সরকার প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছে। তবে ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা ৭ লাখ টন চালের জন্য এলসি খুলেছে। কিন্তু এসেছে ১ লাখ ৬১ হাজার টনের মতো। আরো বেশি আমদানি আসা দরকার। বন্যার কারণে এ বছর আউশ উৎপাদন কম হয়েছে। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। তবে আমনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চালের মূল মৌসুম হচ্ছে বোরো। সরকার পরিকল্পনা করছে কিভাবে তৃণমূল পর্যায়ে আরো উচ্চফলনশীল জাতের ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করা যায়।