খুলনাঞ্চলে দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। খাদ্যের এ দাম না কমলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
আসাদুজ্জামান মঈন কাঠ ফাটা রোদ্রে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের খেলার মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করছেন গরুর খাবারের জন্য। গরমে ঘাম ঝরছে শরীর থেকে, তারপরও ঘাস কাটছেন আর কিছুক্ষণ পর পর কপাল মুছে ঘাম সরিয়ে ফেলছেন।
কথা বলতেই তিনি বললেন, ভাই গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে, প্রতি সপ্তাহে বাজারে গেলে শোনা যায় দাম বাড়ছে। এখন আর আগের মতো ফাঁকা মাঠে, বিলে লম্বা ঘাস পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, গো-খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে বিকল্প খাদ্য হিসেবে ঘাসের সন্ধানে নেমেছি। ঘাস কাটার সময়ে শরীরে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়।
আগের মতো এখন ঘাস দেখা যায় না। এই জায়গায় কিছু ঘাস আছে, তবে ছোট ছোট ঘাস যতটুকু পারি গরুর পেটে একটু খাবার যোগান দিতে পারব।
এছাড়া এখন বাজারে ৩৭ কেজির দেশি গমের ভুসি বস্তাপ্রতি এক হাজার ৯০০ থেকে এক হাজার ৯৫০ টাকা, ৫০ কেজির ধানের গুড়া বস্তাপ্রতি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, ৩৭ কেজির সরিষার খৈল বস্তাপ্রতি এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, ২৫ কেজির দানাদার ফিড বস্তাপ্রতি এক হাজার ৩৮০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সয়াবিন খৈলের এক কেজির দাম ৮৫ টাকা, পাশপাশি বিছালি এক মুঠি দাম আট টাকা পরিবহন খরচ বাদে।
খামারি মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, আমাদের আগে পাঁচটি গরু ছিল, এখন মাত্র তিনটি গরু আছে। দুটি গরু আসন্ন কুরবানি ঈদে বিক্রি করব। তারপর আর মনে হয় গরুর খামারের ব্যবসা করা হবে না। একটি বড় জাতের সবল পুরুষ গরু প্রতিদিন ২০০ টাকার খাবার খায়।
তিনি আরও বলেন যে নিজেদের পরিশ্রম করাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এখন খামারিরা খুবই লোকসানে আছে। যেসব খামারিদের দীর্ঘদিন যাবৎ গরুর খামার ছিল, তারাও এখন এই খামারি ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মতো পর্যায়ে চলে এসেছে।
দুধের ও মাংসের দাম বাড়লেও খামারিরা খুব একটা লাভজনক অবস্থানে নেই। এভাবে চলতে থাকলে, সপ্তাহে সপ্তাহে দাম বাড়লে দেশীয় গরুর খামার এক সময় হারিয়ে যেতে পারে।
এখন আগের মতো গরু চড়ানোর বড় মাঠ আর ঘাস নেই। সব খাবার ক্রয় করে গরুর সামনে দিতে হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মন্ডল বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এখানে সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। মূলত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব কারসাজি করছে। আর বিপদে পড়ছে গরিব খামারিরা।
তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে ভুট্টার দাম কিছু বেড়েছে, সেই সঙ্গে সয়াবিনের খৈলেরও। আমরা সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। বর্তমানে এক ধরনের ঘাস আছে যার নাম পাংচুন ঘাস। এই ঘাস দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এক শতাংশ জমিতে বছরে প্রায় দুই হাজার কেজি ঘাস জন্ম হয়। এই ঘাস গরুদের খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এখন এই ঘাস আড়ংঘাটা শাহাপুর এলাকায় দেখা যায়। আমার পরামর্শ, এই ঘাস চাষ করলে খামারিরা বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তাতে খরচ অনেক কমাতে পারবে।
—-(ইউএনবি
আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষজ্ঞ
চুয়াডাঙ্গায় রাতে বৃষ্টি দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি, রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি