April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 15th, 2021, 1:13 pm

খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি:

খুলনার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শীত মৌসুমের শুরুতে শুরু হয়েছে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব। এলাকাভিত্তিক রাতের আঁধারে কিছু অসাধু চোরা শিকারী ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে।
খুলনার পাইকগাছায় চারবান্ধা, গলবুনিয়া, দিঘি, দক্ষিণ কাইনমূখি, নতুন চক, খড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা দাকোপ, ডুমুরিয়া ও কয়রায় এবং দিঘলিয়া ও তেরোখাদায় অতিথি পাখি শিকার চলেছে। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে অতিথি পাখি শিকার।
শীতে অতিথি পাখিরা আসে হিমেল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়ায় সুখ অনুভবে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঝাঁক বেঁধে আসে বাংলাদেশে। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ আর ঠান্ডা রোদের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশ বাংলাদেশ। শীত মৌসুমে খাবার আর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। এ সময় সাইবেরিয়াসহ অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের তীব্র শীতে তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়।
শুধু তাই নয়, তখন তীব্রভাবে খাদ্য সংকটও দেখা দেয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও শীতের শুরুতে সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আমাদের দেশে এসেছে। নভেম্বরের শুরু থেকে অসংখ্য অতিথি পাখি আমাদের দেশে আসে। বিল-ঝিলগুলো মুখর হয়ে ওঠে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে আনন্দঘন পরিবেশকে করে তোলে আরো প্রাণবন্তকর। আবার শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে গেলে তারা ফিরে যায়।
এদের মধ্যে ডাহুক, তীরশুল, নলকাক, ভাড়ই, রাংগাবনী, গাংচিল, রাতচড়া, হুটটিটি, হারগিলা, বালিহাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালি কাস্তে, চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদাখোচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া অন্যতম। যেগুলোর মধ্যে অনেক প্রজাতিই আজ বিলুপ্তির পথে। পাখি শিকারিদের হাত থেকে অতিথি পাখিদের রক্ষা করার জন্য স্থানীয় মানুষের সচেতনতা সহ প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানোর দাবী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর। তাদের দাবী সচেতনতা ছাড়া কোনোভাবেই পাখি শিকার বন্ধ করা যাবে না। অতিথি পাখি অতিথিদের মতোই। এরা আমাদের মেহমানদের মতো। শীত শেষ হলেই এরা চলে যায় বা অনেক প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে থেকে যায়। এরা আমাদের সম্পদ।
অতিথি পাখির আগমণে দেশের নদ-নদীর সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক, বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ পেতে পাখি শিকারী শুরু করে। বর্তমান সময় বিশেষ রিংটোন ব্যবহার করে অতিথি পাখি শিকার করছে। অনেকে আবার শীতের সময় পখি শিকারকে পেশা হিসেবে নেয়। পেশা হিসেবে যারা নেয়, এটাই হচ্ছে অতিথি পাখিদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য। তারা রাতদিন দৌঁড়ায় অতিথি পাখির পেছনে। যার ফলে অতিথি পাখিরা নিরাপদে কোথায়ও বসতে পারে না।
১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাস্তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
দেশের বেশ কিছু জায়গাকে শীত মৌসুমে অতিথি পাখিরা বেছে নেয় নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে। তখন এই জায়গাগুলো অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। পাইকগাছা বনবিবি সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান বলেন, একটা পাখির মাংস কতটুকুই বা ১০০-২০০ গ্রাম। এই মাংসের একটু স্বাদ নেওয়ার জন্য তাদের নিধন করা হচ্ছে। বন্দুক দিয়ে, ফাঁদ পেতে তাদের শিকার করা হয়। কিন্তু একটু চিন্তা করে না প্রকৃতির কত বড় ক্ষতি করছে তারা। একটি পাখির একটি প্রজাতিও ধ্বংস করে ফেলছে। একজন মানুষ হয়ে সামান্য লোভে পড়ে কি করছে। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতনা সহ প্রশাসনকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহবান জানান তিনি।
দিঘলিয়া উপজেলার আলোর মিছিলের সভাপতি শেখ তারেক জানান, শীতের আগমনের সাথে সাথে শুরু হয় আমাদের দেশে অতিথি পাখিদের আগমন। এ সকল পাখি নবান্নের ধান খেতে জমিতে নামে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই না এ অঞ্চলের শিকারিরা। তারা নানা ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি নিধন করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দিঘলিয়ার নানা সমাজ সেবী সংগঠন পাখি শিকারীরা যাতে পাখি শিকার না করে তার জন্য নানা সচেতনামূলক প্রগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। দিঘলিয়া উপজেলার আলোর মিছিলের উপদেষ্টা জিএম আকরাম এ প্রতিবেদককে জানান, অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশের বন্ধু। এদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আর শিকারীদের বিরুদ্ধে দেশের পরিচালিত আইনে মামলা ও শাস্তি নিশ্চিত না করলে শিকারীরা মিঠা কথায় পাখি শিকার থেকে নিবৃত হবেনা।