ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া খুলনার রহিমা বেগমকে আজ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, রহিমা গত ২৯ দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ ছিল এবং আজ তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে ছিলেন।
খুলনা মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বাড়িটিতে গেলে রহিমাকে দুই নারীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশ অফিসাররা প্রশ্ন করা শুরু করলে তিনি কথা বলা বন্ধ করেন।
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়েছে, তারা এখন বিষয়টি দেখবে। রহিমার ‘নিখোঁজ’ হওয়ার এই পুরো ঘটনা ও তাকে খোঁজ করা সারাদেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে আমরা তাকে খুঁজে বের করতে পেরেছি। আমরা সবাই খুশি এবং স্বস্তি পেয়েছি। বাকিটা পিবিআই তদন্ত করবে। আমি আশাবাদী যে পিবিআই রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে।’
ফরিদপুরের যে বাড়িতে রহিমাকে পাওয়া গেছে সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে রহিমার ছেলে সাদী বলেন, ‘যেহেতু আমার মা জীবিত উদ্ধার হয়েছে, সেহেতু তার মুখে নিখোঁজের বিষয়টি জানলে তিনি ভালো বলতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় যদি আমার পরিবারের কেউ জড়িত থাকে তবে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিষয়টি আরও তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন মোল্লা জাহাঙ্গীর।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়ায় গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে বের হন রহিমা খাতুন (৫৫)। দীর্ঘ সময় পার হলেও তিনি আর বাসায় ফেরেননি। পরে মায়ের খোঁজে বের হয়ে সন্তানরা মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেয়ার পর তাকে না পাওয়া গেলে সাধারণ ডায়েরি এবং পরবর্তীতে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন তারা।
গত ২০ দিনেও রহিমার খোঁজ মেলেনি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের আবেদনে মামলাটি পিবিআইয়ের যাচ্ছে। এ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছয় জনকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো তথ্য উদঘাটন করা যায়নি।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরের আদেশ হয়েছে। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নথি হস্তান্তর হয়নি। পিবিআই যেদিন চাইবে সেদিনই নথি হস্তান্তর করা হবে। এ জটিলতার কারণে এ মামলায় গৃহবধূর স্বামীর রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। পিবিআই মামলাটি বুঝে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এ পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।
নিখোঁজ রহিমা খাতুনের মেয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ আমার মায়ের সন্ধান দিতে পারেনি। ফলে ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮তম দিনে আমার ছোট বোন আদুরি আক্তার আদালতে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তরের আবেদন করে। শুনানি শেষে ওই দিনই আদালত মামলা পিবিআইতে হস্তান্তরের আদেশ দেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম