April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, February 5th, 2023, 7:32 pm

খুলনায় ৫০ টাকায় গরুর মাংস, ৪০ টাকায় মুরগির মাংস!

‘বাজারে এক কেজি ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি করে না। আর এক কেজি কেনার তৌফিক আমাগে নেই। এক কেজি মাংসের দাম ৭০০ টাকার বেশি। যে কারণে আমাগে মতো মানুষের ভাগ্যে মাংস জোটে না। তবে জব্বার স্টোরে মধ্য ও নিম্নবিত্তের প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প টাকায় বাজার করা যায়। সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় গরুর মাংস কেনা যায় এবং সর্বনিম্ন ৪০ টাকায় মুরগির গোশত পাওয়া যায়। তাই শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এখানে আসছি মাংস কেনার জন্য’- কথাগুলো বলছিলেন, খুলনার লবণচরার অটোস্ট্যান্ড সংলগ্ন মেসার্স জব্বারের মোড়ের মেসার্স জব্বার স্টোরের ক্রেতা লিমা বেগম।

তিনি আরও বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম আগুন। চাল-ডাল-তেল কিনতেই হিমশিম খাচ্ছি। তখন গরুর মাংস কেনার কথা কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু আমাগে কথা মাথায় রেখে এ দোকানে এমন ব্যবস্থা করায় আমরা খুবই খুশি।

মেসার্স জব্বার স্টোরের মালিক ইমন হাসান মোস্তফা বলেন, দোকানটি আমার বাবার। এখন আমি পরিচালনা করি। এখানে ৫০, ১০০, ২০০ টাকায় ছোট প্যাকেটে গরুর মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া সর্বনিম্ন ৪০ টাকায় মুরগির মাংস পাওয়া যায়। যাতে সাধ্য অনুযায়ী ক্রেতারা কিনতে পারেন। আমার কাছে কোনো ক্রেতা এসে যেন ফিরে না যায়, সেজন্য মাছ, মাংস, সবজি, মসলাসহ সব ধরণের পণ্য রেখেছি।

কেন এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিলেন জানতে চাইলে ইমন বলেন, ‘শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের সেবা করার জন্য কাজ করছি। বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে মানুষের সুবিধার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছি। এক কেজি গরুর মাংসের যে দাম, তা অনেকেই কিনতে পারেন না। আবার মুরগি কিংবা মাছ একটির যা ওজন হয় তাও অনেকে কিনতে পারেন না। তাদের সুবিধার জন্য আমি ছোট ছোট প্যাকে যার যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু কেনার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া সামনে ইলিশ ও খাসির মাংস আনার চেষ্টা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দোকানে পাঁচ টাকায় অনেক জিনিস পাওয়া যায়। গরম মসলা, লবণ, শুকনা মরিচ, চিনি, হলুদের গুঁড়া, ডাল, তেল, জিরা ও ধনিয়ার গুঁড়া পাঁচ টাকায় পাওয়া যায়। গরিব মানুষের সুবিধার জন্য এ ব্যবস্থা।’

ইমন বলেন, ‘যার যেমন লাগে সে তেমন কেনেন। আমার দোকানে এ ব্যবস্থা নতুন। সামনে পাঁচ টাকায় আরও জিনিসপত্র পাওয়া যাবে।’

সাধারণ ক্রেতারা বলেন, আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। যখন কম টাকা থাকে তখন আমরা কম টাকায় এখান থেকে জিনিস কিনে থাকি।

এছাড়া ইমন হাসান মোস্তফাকে আমাদের সুবিধা করে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।

শহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, দোকানির এমন উদ্যোগে নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ মাছ-মাংসের সামান্য হলেও স্বাদ পাচ্ছেন। এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য এলাকাবাসী মোস্তফাকে ধন্যবাদ জানায়।

এছাড়া অল্প দিনের মধ্যে এলাকায় নিম্ন আয়ের লোকজনের কাছে দোকানটি আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মামুন নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, দ্রব্যমূল্যের এমন কঠিন সময়ে বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট নিয়ে চলছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন। তারা ইচ্ছা করলেই তাদের বাচ্চাদের মুখে মাছ-মাংস তুলে দিতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত শুধু নীরবে কাঁদছেন।

জব্বার স্টোর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, নিম্নবিত্তরা সাধারণত কোরবানির ঈদে গরুর মাংসের স্বাদ পেয়ে থাকেন। সারা বছর আর তাদের গরুর মাংস কপালে জোটে না। আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতে চান না বিক্রেতারা। কিন্তু জব্বার স্টোরে আপনার সুবিধা অনুযায়ী ছোট ছোট প্যাকেটে গরু ও মুরগির মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাচ্ছে।

এতে গরিব মানুষের অনেক সুবিধা হচ্ছে। এমন উদ্যোগ সব দোকানির চালু করা দরকার।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিউল হক বলেন, মেসার্স জব্বার স্টোর থেকে যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কেনা যায়। বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ধরণের উদ্যোগ আরও আগে চালু করা উচিত ছিল। এ রকম ব্যবস্থায় স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটে। কাউকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় না দোকান থেকে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ব্যবস্থায় প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ সেবা পাবে। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি মানবিক সেবা করায় মেসার্স জব্বার স্টোরের মালিক ইমন হাসান মোস্তফাকে আমি সাধুবাদ জানাই।

—-ইউএনবি