November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 28th, 2024, 9:16 pm

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার!

কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার বসানো হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এদিকে হাসপাতালের মধ্যে নবনির্মিত গ্যারেজের মধ্যেই চেয়ার-টেবিল বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার। পাশে ঝোলানো হয়েছে খুলনা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি লিমিটেড পরিচালিত, অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার।

এছাড়া হাসপাতালের মধ্যে ও বাইরে রাস্তা দখল করে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো। দূর থেকে দেখে মনে হবে এটা কোনো সরকারি হাসপাতাল না, যেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। রোগী পরিবহনে চাহিদা যতটা, তার চেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি। কিন্তু রোগী পেলেই ভাড়া হাঁকা হয় অনেক বেশি।

হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স না নিয়ে অন্য কোথাও থেকে কম টাকায় ভাড়া করার সুযোগ নেই। হাসপাতালের মধ্যে নবনির্মিত গ্যারজের জায়গা দখল করে তোলা হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার।

কাউন্টারের সামনে ১০ থেকে ১২টা অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি বিভাগের সামনে রয়েছে ৪ থেকে ৫টা, হাসপাতালের আউটডোর পেছনে রয়েছে ৭ থেকে ৮টা অ্যাম্বুলেন্সের সারিবদ্ধ লাইন।

এর বাইরে লাশ ঘরে যেতে যে রাস্তা সেখানেও রয়েছে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে বাইরে রয়েছে আরও ১০ থেকে ১২টা অ্যাম্বুলেন্সের লাইন। দূর থেকে যে কেউ মনে করবেন, এটা কোনো সরকারি হাসপাতাল নয়, অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্যান্ড।

রোগীও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালকেন্দ্রিক ‘অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’ রোগীকে বাইরের অ্যাম্বুলেন্সে তুলতেই দেয় না। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অ্যাম্বুলেন্সের মতো একটি জরুরি পরিবহন সেবাকে ঘিরে এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স এক চালক জানান, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় ট্রিপ কমে গেছে। এ কারণে খরচ পোষাতে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নিতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার কোনো তালিকা নেই। নেই সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালাও। যে যেভাবে পারছেন রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স নামাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে হাসপাতালগুলোর কর্মচারীদের (ওয়ার্ডবয় ও আয়া) উপর। এজন্য তাদের ভাড়ার একটা অংশ কমিশন দিতে হয়। এ কমিশন বাণিজ্য না থাকলে ভাড়া অনেকটাই কমে যেত।

এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স কয়েকজন চালকরা আমার কাছে এসে বলেন, তাদের নিজস্ব জায়গায় কাউন্টার কাজ বসানোর কাজ চলছে। ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে তাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এই অনুরোধের কারণে তাদের বলেছিলাম কয়েকদিনের জন্য হাসপাতালের ভেতরে কাউন্টার রাখার জন্য। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পরে জানতে পারলাম এদের একটু মানবিক দিক সুযোগ দেওয়ায় পুরো হাসপাতালটাই দখল করে নিয়ে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে মধ্যে কোনো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকতে পারবে না, রোগীদের প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাড়া আনতে পারবেন। এর বাইরে হাসপাতালের জায়গা দখল করে অ্যাম্বুলেন্স রাখার সুযোগ নেই।

খুলনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মেহেদী নেওয়াজ জানান, মেডিকেল কলেজের নিজস্ব অ্যামবুলেন্স যার মাধ্যমে রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। তারপরও বেসরকারি অ্যামবুলেন্স চালু হয়েছি বলে শুনেছি। কোনো রোগীকে যাতে হয়রানি না করা হয় সে জন্য প্রোয়জনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুর মোরশেদ বলেন, এ ব্যবসা অনেকদিন যাবত চলছে। খুমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনি সহযোগিতায় তাদের উঠিয়ে দিলে কিছুদিন পর আবার তারা বসতে শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, খুমেক হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেই ব্যবস্থা নেবে।

—-ইউএনবি