জেলা প্রতিনিধি, রংপুর :
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আকস্মিক তিস্তার বন্যায় উপজেলার তিস্তাবেষ্টিত ৭ ইউনিয়েনর প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তীব্র স্রোতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ভেঙে যায়, তালিয়ে নষ্ট হয়েছে শত শত একর আমন ধান। ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকারমত মাছ। গান্নার পাড়ে তিস্তা ডানতীর রক্ষা বাঁধ ও রংপুর টু কাকিনা সড়কের শেখ হাসিনা সেতুর উত্তরে মিলন বাজার এলাকায় সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কিছু কিছু এলাকায় বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। পানি উঠেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মাঠে। পানিবন্দি নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। জারি করা হয় রেড এলার্ট, মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের জন্য মাইকিং করা হয়। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলিইডি, ত্রাণ ও পূর্ণবাসন, কৃষি, মৎস্য বিভাগের লোকজন ও ইউপি চেয়ারম্যান গণ বন্যা ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে নিয়েছেন ব্যাবস্থা। পানিবন্দি পরিবাগুলো উচুস্থান ও বাঁধে পলিথিন টাংগিয়ে গবাদী পশু নিয়ে জেগে রাত কেটেছে। সরকারিভাবে ২০ টন চাল বরাদ্দ ও ১ হাজার শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ভারতের গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজে সবকটি গেট খুলে দিলে ডালিয়া পয়েন্টে ব্যারেজে ৪৪ টি গেট খুলে দেওয়া দেওয়া হয়। এতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুপুরের পর ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। জারি করা হয় রেড এলার্ট। এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বচ্চ বন্যার সৃষ্টি হয় গঙ্গাচড়ায়। তিব্র স্রোতের পানি মানুষের বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ায় অনেকের আসবাবপত্র ভেসে যায় ও ক্ষতি হয়। মানুষজন জানায় দুপুরের পরে পানি বাড়লেও সন্ধ্যার দিকে আরো বেড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। জলাশয়, মৎস্য খামার, বিল ও পুকুরের প্রায় কোটি টাকার মত মাছ ভেসে যায়। শত শত একর আমন ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হয়। রাস্তা-ঘাট ভেঙে যায়। সেনাবাহিনী লক্ষীটারী ইউনিয়নে গিয়ে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়সহ বন্যা এলাকায় অবস্থান নিয়ে সার্বিক পর্যবেক্ষন করে। স্থানীয় এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর, গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, ইউএও তাসলীমা বেগম, রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ, কৃষি ও মৎস্য বিভাগের লোকজন এবং ইউপি চেয়ারম্যানগণ, পুলিশ ও ফাঁয়ার সার্ভিসের সদস্যরা গভীর রাত পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকায় অবস্থান করেন। ডানতীর রক্ষা বাঁধ ও সড়কের ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ রাতেই শুরু করা হয়। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তার ইউনিয়নে বিনবিনাচর, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, সাউদপাড়া, কুড়িবিশ্বা, উত্তর কোলকোন্দ, দক্ষিন কোলকোন্দ বাঁধের ধারসহ ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে, তিনি তার ইউনিয়নের ৪ হাজার পানিবন্দি মানুষকে রাতেই খেচুরি রান্না করে খাওয়াইছেন। লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তার ইউনিয়নের ইচলি, বাগেরহাট, কলাগাছি, চল্লিশসাল, কাশিয়াবাড়ি, শংকরদহসহ বিভিন্ন এলাকার ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়। তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যায় মাইকিং করেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের তথ্যমতে আলমবিদিতর ইউনিয়নের ব্যাংকপাড়া, হাজীপাড়া, পাইকান,বড়াতিপাড়ার ১ হাজার পরিবার, নোহালী ইউনিয়নের মিনার বাজার, নোহালীর চর, নেঙরাবাজার, কচুয়াসহ নিম্ন এলাকার ৩ হাজার পরিবার, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের গান্নারপাড়, ধামুর বাঁধের এলাকা, বোল্লারপাড়ের ১ হাজার পরিবার, গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, আলমার বাজারসহ নিম্ন এলাকার ২ হাজার পরিবার এবং মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়ার চর, তালপট্টি, খলিফারসহ নিম্ন এলাকার ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে তিস্তার পানি বুধবার রাত ৩ টার পর কমতে থাকায় বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত কিছু কিছু এলাকার বাড়ি-ঘরের পানি নেমে গেছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার এমপি মসিউর রাহমান রাঙ্গা, ইউএনও তাসলীমা বেগম কোলকোন্দ ইউনিয়নে শুকনো খাবার বিতরন করেন। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি