জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (গঙ্গাচড়া) :
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি অফিসের গুদাম থেকে দুটি ভ্যানে করে ১২ বস্তা সার ও ১৪ বস্তা ধানবীজ বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকাল অনুমান সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা পরিষদের সামন দিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় বীজ ও সার বহনকারী ভ্যান দুটি উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের নজরে পড়ে। বিষয়টি সন্দেহ হলে তিনি ভ্যান দুটি আটক করেন এবং চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ভ্যান চালকদের সদুত্তোর না পাওয়ায় তাদের ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যান। ইউএনওর কার্যালয়ে ভ্যানচালক মিঠু মিয়া ও শরিফুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই সার ও ধানবীজ কৃষি অফিস থেকে নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী আলমগীর পাঠিয়েছে।
ভ্যানচালকদের কথা অনুযায়ী ইউএনও নাহিদ তামান্না বিষয়টি গঙ্গাচড়া থানা পুলিশকে জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন সার ও ধান বীজ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যায় গঙ্গাচড়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মমতাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ায় আলমগীরের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তার একটি ঘর থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় আরও ১৫৩ বস্তা উফশী জাতের ধানবীজ ও এক বস্তা পাটবীজ উদ্ধার করেন। তবে অভিযানের খবরে আলমগীর মিয়াসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান।
বাড়ি ও ভ্যান থেকে ১০ কেজির করে মোট ১৬৭ বস্তা উফশী জাতের ধান বীজ, প্যাকেটজাত করা এক বস্তা পাটবীজ ও ৫০ কেজি করে ১২ বস্তা টিএসপি ও এমওপি সার উদ্ধার করা হয়। ধান ও পাটবীজের গায়ে লেখা ছিল বিক্রয়ের জন্য নহে। এ ঘটনায় উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলমগীর হোসেনসহ আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, তাঁদের এক কর্মী কৃষি গুদামের দায়িত্ব পালন করেন। এ কর্মী কৃষকদের মধ্যে ওই প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করেছিলেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করার পর জানা যাবে। ওই কর্মী উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলে জানান তিনি। অভিযোগ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি স্লিপ নিয়ে গুদাম থেকে কৃষকদের সরকারি ধানবীজ ও সার দিয়েছি। এখন কৃষক বিক্রি করেছে কি না, সেটা জানি না। এখন আমার বিরুদ্ধে সার ও বীজ বিক্রির মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ও উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোত্তালিব মিঠু বলেন, কৃষি অফিসের যোগসাজশ ছাড়া সরকারী বীজ ও সার পাচার হওয়া সম্ভব নয়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করছি।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত ) মমতাজুল হক বলেন, সরকারী প্রণোদনার বীজ ও সার উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এর সাথে যেই জড়িত থাক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, আগামী রোববার মিটিং ডাকা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি