জেলা প্রতিনিধি, রংপুর :
টানা ১ সপ্তাহ ধরে অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের ঢলে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে গ্রামগুলো। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫ হাজার বাড়িঘর।
নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট ও শংকরদহ এলাকায় পানিতে প্লাবিত হয়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জমির ফসল ও রাস্তাঘাট। দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে পড়ে আছি আমরা। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বাসা করছি। খাওয়া দাওয়া করছি অনেক কষ্ট করে। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এখনো।
সরেজমিনে জানা গেছে, তিস্তার পানি প্রায় সাত দিন ধরে বাড়ছে। দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে তারা স্থানীয়রা জানান। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি, বসতবাড়ি।
লক্ষীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে ভোররাত থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই এলাকায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর পানির নিচে। রাস্তা ভেঙে গেছে ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের। পানি বৃদ্ধির ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
লক্ষীটারি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মানিকা বেগম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে তিস্তায় পানি বাড়ছে, ভাঙন চলছে। পানি যদি আরো বাড়ে তাহলে এই পুরো এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পরিষদ থেকে যতটুকু দেওয়ার আমরা দিয়ে যাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষগুলো।
কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈখাওয়া অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায়, তাহলে খৈখাওয়া,পাঙ্গাটারি, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় ১১ থেকে ১২টি গ্রামে ভাঙন দেখা দেবে। আউলিয়া বাজার, বিনবিনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হু হু করে বাডছে তিস্তার পানি। এছাড়া চিলাখালচর ও মটুকপুরচরে পানি ঢুকেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এসব এলাকার বাসিন্দারা একটু সমস্যায় পড়ছে। তাদেরকে উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, টেকসই মজবুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়া পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে যদি ভাঙনের খবর পাওয়া যায় সেখানেও জিওব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধি ফলে নোহালীর চর, বৈরাতি, ছালাপাক, মর্নেয়ার চর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দিন পিএএ জানান, পিআই ও উপজেলা প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে। সহায়তা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি