জেলা প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ (গজারিয়া):
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কয়েক’শো গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শাখা অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে বায়রা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বীমা কোম্পানির লোকজন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা রবিবার বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। বিষয়টিতে ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সরেজমিনে রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গিয়ে দেখা যায় কয়েক’শো নারী পুরুষ ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটোক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন। তাদের কারো হাতে ডিপিএস-এর সনদপত্র কারো হাতে মাসিক জমার পাশ বই। কাছে গিয়ে তাদের কাছে বিক্ষোভ করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান তারা সবাই বায়রা লাইফ ই›স্যুরেন্স কোম্পানি কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন। নিজেদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে তারা ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে বড় রায়পাড়া গ্রামে গজারিয়া শাখা চালু করে বেসরকারি জীবন বীমা খাতের কোম্পানি বায়রা লাইফ। শাখাটির দায়িত্বে থাকা হালিম মৃধা ওই শাখায় বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর দ্বিগুণ মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শতশত পলিসি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা গ্রহণ করেন তারা। ২০২৩ সাল থেকে ওই শাখা অফিসে তালা ঝুলিয়ে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধাসহ অন্য কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করতে চাইলে এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধা তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান জুয়েলের নিকট আত্মীয় হওয়ায় চেয়ারম্যান বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগী পারভিন আক্তার বলেন, এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধা তাকে ১০ বছর মেয়াদে ১০ হাজার টাকা করে একটি ডিপিএস করতে বলেন। প্রথমে না করলেও পরে তার কথায় প্রভাবিত হয়ে ২০০৮ সালে দশ বছর মেয়াদী একটি ডিপিএস করেন তিনি। ২০১৮ সালে দ্বিগুণ টাকা ফেরত পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত একটি টাকাও পাননি তিনি। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর ধরে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন’।
আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক আল আমিন বলেন, ২০১০সালে তাদের প্রলোভনে পড়ে আমি একটি ডিপিএস করি। চার বছর আগে মেয়াদ পরিপূর্ণ হলেও আমি টাকা পাইনি। অভিযোগ নিয়ে আমরা বেশ কয়েকজন গ্রাহক ঢাকায় কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের জানানো হয় আমাদের কোন টাকা নাকি জমা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা তখন থেকেই আন্দোলন করছি। যে কোন মূল্যে আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই’।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত বায়রা লাইফ ই›স্যুরেন্স কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হালিম মৃধা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ না বুঝে আমাকে অভিযুক্ত করছে। আমি গ্রাহকের টাকা নিয়ম মাফিক ঢাকা অফিসে জমা দিয়েছি। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও যে তারা টাকা পাচ্ছেন না এটা দুঃখজনক’।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে ফোন কল করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি সম্পর্কে বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন,, বিষয়টি আমি আজকে জানলাম। ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদে এসে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবো’।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে কেউ যদি আমার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় তবে আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি