November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 18th, 2022, 8:02 pm

গণপরিবহনের অবস্থা যাচ্ছেতাই, মানা হচ্ছে না বিধিনিষেধ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসছে করোনা। বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। এ যেন শেষ চরম ধাক্কা হতে যাচ্ছে। সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার শূন্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। এখন আবার তা ১৪ শতাংশের ওপরে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই হার। নতুন এই ঢেউয়ের শুরুতে সংক্রমণের বেশির ভাগই ছিল ঢাকায়। এখন আবার তা সারা দেশে ছড়াতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গণপরিবহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনসহ যে ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করেছিল, কোথাও সেগুলো সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। বাণিজ্য মেলাসহ জনসমাগমের স্থানগুলোতে মানুষের মধ্যে নূন্যতম সচেতনতাও দেখা যায় না। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা তো দূরের কথা বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পর্যন্ত পরে না। এ অবস্থায় মহামারি আরো প্রবলরূপে ফিরে আসার আশঙ্কাই করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয় সরকার। পরে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সে নির্দেশনাও কেউই মানছেন না। দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়া এবং ওয়েবিলের যন্ত্রণা থেকে রেহায় পায়নি যাত্রীরা। এভাবে চলতে থাকলে গণপরিবহনে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপরিবহন মালিকরা একটু কিছু হলেই ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করে দেন। অর্ধেক যাত্রীর ব্যাপারটি উঠতেই তারা ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু করে দেন এবারও। যদিও পরিবহণে অর্ধেক যাত্রী কিভাবে নিশ্চিত করতে হবে সে ব্যাপারে তাঁদের হাতে কোন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ ছিল না। সূত্র জানায়, গণপরিবহনের চিত্র সেই আগের মতোই, বরং দশা কোন কোন ক্ষেত্রে আরও করুণ। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। স্টপেজে থামতেই হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা নেমে পড়ছেন। আবার একইভাবে উঠছেন। বিধিনিষেধের ধারেকাছে দেখা গেল না শহরবাসীকে। সরকারি নির্দেশকে তোয়াক্কা না করেই মাস্কহীন মানুষদের চলাফেরা রাজধানী জুড়ে। যদিও সরকার বার বার সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে কিন্তু তাতেও হুঁশ ফিরছে না কারোরই।
জানা যায়, ঘরোয় জনসমাগম হোক আর গণপরিবহন হোক শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের কোনো মাস্কই থাকে না। আর বাকি ৬০ ভাগের অর্ধেকই মাস্ক দিয়ে নাক, মুখ না ঢেকে থুতনির নিচে নামিয়ে রাখেন, যা কোনো কাজে আসছে না। অর্থাৎ ৭০ ভাগ মানুষের কাছেই মাস্ক উপেক্ষিত।
করোনার ব্যাপারে আমাদের দেশের অনেক মানুষের মধ্যেই একটা ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব লক্ষ্য করা যায়। ২০২০ সালের জুলাই মাসের দিকে যখন আমাদের দেশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিন ৪০/৫০ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন গণপরিবহনে নির্দেশনা ছিল হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখা ও যাত্রী ওঠানোর সময় তাদের হাতে দেওয়া। সূত্র জানায়, সেসময় রাজধানীর অনেক জায়গায় গণপরিবহনে পুলিশ সদস্যরা নরজদারি করেছিলেন নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা। কিন্তু পুলিশ যখন বাসে উঠে, তখনই অনেকে মাস্ক পরে, কিংবা সিটের দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু পুলিশ সদস্য সরে যাওয়ার পরই অবস্থা ঠিক আগের মতো হয়ে যায়।
বর্তমানে অবশ্য পুলিশ সদস্যদের বাসে বাসে উঠে তদারকি করতে দেখা যাচ্ছে না। বাসের ভেতরের অবস্থাই তো জনাকীর্ণ, তদারকই বা করবে কীভাবে। ভেতরে তো হাঁটার জায়গা পর্যন্ত থাকে না বাসগুলোতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনের এই ঠাঁসাঠাসি চিত্র প্রতিরোধ করতে হবে। তাঁদের মতে, শুধু গণপরিবহন নয়, সব জায়গায় বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে। বিধিনিষেধ না মানলে আক্রান্তের পাশাপাশি আরও বাড়বে মৃত্যুর মিছিল। পরিস্থিতি একেবারেই লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানসম্মত বিধিনিষেধ দিতে হবে। সেটিও কার্যকর করতে হবে। যদি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে সারা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারে। কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের দোকানপাট এখন খোলা। অলিগলিতে চায়ের দোকান খোলা রয়েছে। সেখানে জটলা পাকিয়ে রীতিমতো আড্ডা বসে যাচ্ছে। মাস্ক পরার বালাই নাই। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরা থাকলে সংক্রমণ কম হবে। সড়কে মানুষের অহেতুক চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়ানো প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনে চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা দরকার।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে চলমান গণপরিবহন বিশেষকরে বাসগুলোতে বিরাজ করছে চরম অসচেতনতা। বাসের হেল্পার, কন্ডাক্টার কিংবা চালক কেউ করোনার ব্যাপারটাকে তোয়াক্কা করছেন না। বেশিরভাগ লোকাল বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ যাত্রীই মুখে মাস্ক নেই। চালক থেকে শুরু করে হেলপারদের মুখেও মাস্ক চোখে পড়ে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যাচ্ছে কোনও গণপরিবহনে। চালকের সহকারীরা যাত্রী টেনে টেনে বাসে তুলছেন। সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকি। অধিকাংশ বাসে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। সব গণপরিবহনে একই অবস্থা। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি (বিআরটিএ)। বিভিন্ন এলাকায় এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। তবে গণপরিবহন ও যাত্রীদের সংখ্যার দিক দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান সাধারণ যাত্রীরা। এ সময় বেশ কিছু পরিবহনকে জরিমানার আওতায় আনা হয়। পাশাপাশি মাস্ক পরিধান না করে গণপরিবহনে চলাচল করায় বহু যাত্রীদের সতর্ক করা হয়।
ওমিক্রনের এই উচ্চমাত্রায় সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশ। দেশব্যাপী চলছে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন। চলছে প্রচার-প্রচারণা, কোলাকুলি, টাকা বিলাবিলি। নির্বাচনী হাওয়ায় চায়ের দোকান সরগরম। কোথাও মানা হচ্ছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি।
এই ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে দেশ খুব দ্রুতই যে সংকটময় পরিস্থিতিতে চলে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণপরিবহনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম মানে না। সব আসনে যাত্রী পরিবহন করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পালন করা হয় না। সরকারের নজরদারি রাখা প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।