অনলাইন ডেস্ক :
উত্তেজনাময় খেলা তখন শেষ। এরপর শুরু হলো আরেক খেলা। কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে গেলেন গৌতম গম্ভির ও বিরাট কোহলি। একপর্যায়ে একদম মুখোমুখি হয়ে গেলেন দুজন। তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারছিলেন না সতীর্থরা। একটা সময় অবশ্য আলাদা করা গেল দুজনকে। তবে ততক্ষণে রচনা হয়ে গেল দৃষ্টিকটূ এক অধ্যায়ের। ছোট পুঁজি নিয়ে কোহলিদের দারুণ জয় ছাপিয়ে আলোচনার ঝড় তুলল এই ঘটনাই। আইপিএলে সোমবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচ শেষের ঘটনা এটি। আচরণবিধি ভঙ্গের এই ঘটনায় দুজনকেই ম্যাচ ফির পুরো একশ শতাংশ জরিমানা করা হয়। এই ম্যাচেই কোহলির সঙ্গে আরেক ঘটনায় ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয় লক্ষ্ণৌর আফগান পেসার নাভিন-উল-হককে। লক্ষ্ণৌতে এই ম্যাচে স্রেফ ১২৬ রানের পুঁজি নিয়েও ১৮ রানের দারুণ জয় পায় বেঙ্গালোর। গম্ভির-কোহলির ঝামেলার উৎস খুঁজতে চলে যাওয়া যেতে পারে ১০ বছর পেছনে।
২০১৩ আইপিএলে একটি ম্যাচে বেশ এক চোট লেগে গিয়েছিল সেই সময়ের কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক গম্ভির ও বেঙ্গালোর অধিনায়ক কোহলির। তখনও তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ওই ঘটনা। এরপর থেকে আর এই দুজনের সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়নি। খেলা শেষে ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করার পালায় গম্ভিরকে নানা সময়ে দেখা গেছে কোহলির তীব্র সমালোচনা করতে। এখন কোহলি আর বেঙ্গালোরের অধিনায়ক নন। খেলোয়াড়ি জীবন বেশ আগেই চুকিয়ে গম্ভির এখন কাজ করছেন লক্ষ্ণৌ দলের ‘গ্লোবাল মেন্টর’ হিসেবে। এবারও দুজনের লেগে গেল বাজেভাবে। এই ম্যাচে অবশ্য আগে লেগে যায় কোহলি ও নাভিনের। লক্ষ্ণৌর রান তাড়ায় ১৭তম ওভারে ব্যাটিংয়ে থাকা নাভিনের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়াতে দেখা যায় কোহলিকে। পরে টিভি রিপ্লে দেখে যা মনে হয়, কোহলি হয়তো কিছু একটা বলেছিলেন নাভিনকে। এই আফগান ক্রিকেটার তখন বেশ চটে গিয়ে ভারতীয় তারকার দিকে এগিয়ে যান।
কোহলি তো পিছপা হওয়ার লোক নন! উইকেটে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান অমিত মিশ্র ছুটে গিয়ে তখন নিবৃত্ত করেন কোহলিকে। বেঙ্গালোরের কর্ন শর্মা সরিয়ে নেন নাভিনকে। কোহলির দিকে ছুটে আসেন তখন আম্পায়ারও। পরে আম্পায়ারে সঙ্গে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখা যায় কোহলিকে। সেই ঘটনার রেশ রয়ে যায় ম্যাচ শেষেও। দুই দলের ক্রিকেটারদের করমর্দনের সময় কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় কোহলি ও নাভিনকে। করমর্দনের সময় খুব আন্তরিক মনে হয়নি কোহলি ও গম্ভিরকেও। একটু পর লক্ষ্ণৌর ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার কাইল মেয়ার্সকে দেখা যায় কোহলির সঙ্গে কথা বলতে। মেয়ার্সের হাতের ভঙ্গি ও শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল, ব্যাটিংয়ের কিছু একটা নিয়ে কথা বলছেন। তখন গম্ভির এসে মেয়ার্সকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যেতে থাকেন মাঠের বাইরের দিকে। তখন হয়তো পেছন থেকে কোহলি কিছু একটা বলে থাকতে পারেন। হুট করেই ঘুরে দাঁড়িয়ে গম্ভির কিছু একটা বলতে বলতে এগিয়ে যান কোহলির দিকে। ছুটে এসে তখন তাকে থামান লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল।
কিন্তু গম্ভির থামেননি। আবারও তিনি প্রায় তেড়ে যেতে থাকেন কোহলির দিকে। এবার লক্ষ্ণৌর তরুণ পেসার মহসিন খান গম্ভিরকে প্রায় জড়িয়ে ধরে আটকে রাখেন। কিন্তু তাকে ছিটকে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন গম্ভির। বারবার চেষ্টায়ও থাকে থামাতে পারছিলেন না মহসিন। অন্যদিক থেকে কোহলিও এগিয়ে আসেন। দুজন এবার মুখোমুখি। তবে কোহলিকে এবার খুব উত্তেজিত দেখা যায়নি। গম্ভিরের কাঁধে হাত রেখে বোঝানোর মতো ভঙ্গিতে কিছু বলতে দেখা যায় তাকে। কিন্তু গম্ভির মাথা নাড়িয়ে জবাব দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্ণৌর অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র এসে কোহলিকে সরিয়ে দেন কিছু একটা বলে। এরপর দুই দলের ক্রিকেটার ও ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা দুজনকে আলাদা করে দেন। আচরণবিধির ২.২১ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পরে জরিমানা হয় তাদের, যে ধারায় বলা হয়েছে প্রকাশ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে খেলার দুর্নাম বয়ে আনা। কোহলির সঙ্গে বেঙ্গালোলের যে চুক্তি, তাতে ম্যাচ ফি যথেষ্টই বড় অঙ্কের হওয়ার কথা।
গম্ভিরের ম্যাচ ফির পরিমাণও খুব একটা কম হওয়ার কথা নয়। এমনিতে মাঠে আগ্রাসী শরীরী ভাষা দেখানো বা আবেগের প্রদর্শন কোহলির জন্য নতুন কিছু নয়। তবে এ দিন ফিল্ডিংয়ের সময় একটু বেশিই উত্তেজিত ও আবেগময় দেখা যায় তাকে। প্রতিটিই উইকেট উদযাপনেই তিনি ছিলেন খ্যাপাটে। ক্রুনাল পান্ডিয়ার ক্যাচটি নিয়ে লক্ষ্ণৌর গ্যালারির দর্শকদের চুপ করানোর ভঙ্গিতে দেখা যায় তাকে। এটা হতে পারে গম্ভিরকে দেওয়া জবাব। এই মৌসুমেই দুই দলের আগের লড়াইয়ে শেষ বলে লক্ষ্ণৌর ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ের পর এভাবেই বেঙ্গালোরের দর্শকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার ভঙ্গি করতে দেখা গিয়েছিল গম্ভিরকে। সামাজিক মাধ্যমে দুই দলের লড়াইয়ে অফিসিয়াল পাতায়ও দেখা যায় লড়াইয়ের ঝাঁজ।
আগের লড়াইয়ে ১ উইকেটের সেই জয়ের পর লক্ষ্ণৌ টুইট করে, “”Ladies and gentlemen, this how you„ PLAY BOLD.” এই ‘PLAY BOLD’ বেঙ্গালোরের দলীয় স্লোগান। নিশ্চিতভাবেই তা ছিল খোঁচা। এবার এই জয়ের পর কোহলির চুপ করিয়ে দেওয়ার সেই ছবি শেয়ার করে বেঙ্গালোর টুইট করে, “What goes around, comes around.” ম্যাচ শেষে এত সব ঘটনার পর রাহুলের সঙ্গে লম্বা সময় কথা বলতে দেখা যায় কোহলিকে। এ ছাড়া লক্ষ্ণৌর অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিসের সঙ্গে স্বতস্ফূর্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবেও কথা বলতে দেখা যায় ভারতীয় ক্রিকেটের এই মহাতারকাকে।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা